বাংলাদেশের লালনসংগীতের এক অবিস্মরণীয় কণ্ঠ, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে তাকে তিন দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুরুতে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। তবে কিছুটা উন্নতি দেখা দিলে গত রোববার থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ফরিদা পারভীনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গতকাল সোমবার সকালে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্বামী, যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, সামান্য উন্নতি হলেও ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে এটি তার তৃতীয়বারের মতো আইসিইউতে ভর্তি হওয়া। ফুসফুস ও কিডনিজনিত জটিলতা বেড়ে গেছে। তার শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে নিজে থেকে উঠে দাঁড়ানো বা হাঁটাচলা করা একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। তিনি দেশের মানুষের কাছে ফরিদা পারভীনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
গাজী আবদুল হাকিম আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র অর্থ নয়, তারা চান রাষ্ট্র এগিয়ে এসে ফরিদা পারভীনের উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করুক। কারণ দেশের সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণপুরুষ এই শিল্পীর সুস্থতা শুধু পরিবারের নয়, জাতিরও প্রয়োজন।
প্রতিভাময়ী এই শিল্পী ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীতের মাধ্যমে তার সংগীতজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেন। লালনসংগীতে তার সরাসরি তালিম নিয়েছিলেন সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে। পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন এই ধারার এক অনন্য কণ্ঠ।
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে ফরিদা পারভীনকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন। এরপর ২০০৮ সালে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হয় ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার।
শিল্পী হিসেবে তার অবদান যেমন বিশাল, তেমনি এখন তার অসুস্থতা দেশের সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সকলেই কামনা করছেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও মঞ্চে ফিরবেন লালনসংগীতের এই প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী।