জানা নিউজ

সেনাবাহিনী অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত: সেনাসদর

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। পাশাপাশি, গুম, অস্ত্র লুট, কিশোর গ্যাংসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথাও জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন এখনো সেনাবাহিনীর কাছে কোনো নির্দেশনা পাঠায়নি। তবে যেকোনো মুহূর্তে নির্দেশনা এলে সেনাবাহিনী অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর নানা কার্যক্রম তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কর্নেল শফিকুল জানান, গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গুলির খোঁজ পেয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৩ জন সন্ত্রাসী। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র। একই সময়ে, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫৬২ জনসহ মোট ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

থানাগুলোতে অস্ত্র লুটের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশও নির্বাচনের আগেই উদ্ধারের আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গুমের প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে কর্মরত, তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে। তবে তদন্ত ছাড়া কাউকে দায়ী করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি কেউ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান, তাহলে আমরা যথাযথভাবে সহযোগিতা করব।”

অন্যদিকে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর তৎপরতা প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ৪০০ জনেরও বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, “অলিতে-গলিতে সেনাবাহিনী সব সময় থাকতে পারে না। তবে তথ্য পাওয়া মাত্রই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

এই সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গুমের অভিযোগের তদন্ত কিংবা নির্বাচন—সবক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী সক্রিয় এবং কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখতে তারা যথাযথভাবে কাজ করছে বলে জানান কর্নেল শফিকুল ইসলাম।