জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলেও, নতুন বাংলাদেশ গঠনের অংশ হিসেবে এই কাঠামো প্রতিষ্ঠাকে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি মনে করেন, যারা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে, তারা মূলত অতীতের ফ্যাসিবাদী কাঠামোর মধ্যেই থাকতে চান।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নাহিদ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মোড় ঘোরানো অধ্যায়। সেই গণআন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাই— আপনারা এনসিসি গঠন নিয়ে মত দিন। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় ফিরে যেতে চান কিনা, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে।”
তিনি দাবি করেন, এনসিপি শুরু থেকেই জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পক্ষে ছিল, তবে গঠনের কাঠামো ও প্রক্রিয়া নিয়ে দলের কিছু গঠনমূলক মতভেদ রয়েছে। বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন— এনসিসির আওতায় যেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি না থাকেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিয়োগের ক্ষমতাও যেন এই কাউন্সিলের হাতে না থাকে।
নাহিদ বলেন, “নির্বাহী বিভাগের অসম ক্ষমতা হ্রাস করতেই আমাদের এই নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এনসিসি গঠন ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের একটি প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। আমরা এমন একটি কাঠামো চাই, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।”
নাহিদ ইসলাম দেশের প্রধান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “মানবাধিকার কমিশন থাকার পরও গত ১৬ বছরে তারা জনগণের পক্ষ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। দুদক ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নির্দিষ্ট দল ও ব্যক্তির আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছিল।”
তবে শুধু বিরোধিতা নয়, যারা এনসিসির বিরুদ্ধে মত দিচ্ছেন, তাদেরকে বিকল্প প্রস্তাব পেশের আহ্বান জানান তিনি। “না বললেই হবে না, বিকল্প কী চান, সেটাও বলুন,”— বলেন নাহিদ।
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত এই বৈঠকটি ছিল এনসিসি গঠন বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও এনসিসি-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।