জানা নিউজ

ব্রাজিলে ব্রিকস নেতাদের বৈঠকে ট্রাম্পের অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপের হুমকি

বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে, সেই প্রেক্ষাপটে ব্রিকস জোটকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত রোববার ট্রুথ সোশ্যাল-এ প্রকাশিত এক বার্তায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, যেসব দেশ ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন নীতি অনুসরণ করবে যা তাঁর মতে ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। কোনো দেশের ক্ষেত্রেই এ নীতি থেকে ছাড় থাকবে না বলে সতর্ক করেছেন তিনি। খবর বিবিসি, রয়টার্স এবং ফোর্বসের।
ব্রিকস জোট মূলত উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের নেতাদের প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে জোটটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হয় এবং ২০২৩ সালে মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই জোট বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৪০ শতাংশ অবদান রাখে।
রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে ব্রিকসের ১৭তম শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। ওই সম্মেলন থেকে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ব্রিকস হচ্ছে সেই ‘নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’-এর উত্তরসূরি, যারা শীতল যুদ্ধের সময় কোনো মেরুকরণে যেতে চায়নি। তিনি আরও বলেন, “একবিংশ শতকের বহুমুখী বাস্তবতাকে যদি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা প্রতিফলিত করতে না পারে, তাহলে সেই দায়িত্ব ব্রিকসের কাঁধেই এসে পড়ে।” লুলা এ-ও উল্লেখ করেন, ক্রমবর্ধমান সুরক্ষা ব্যয় এবং সামরিকীকরণের বদলে আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের গুরুত্ব রয়েছে।
সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথমবারের মতো উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর পরিবর্তে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং অংশ নেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনলাইনে যুক্ত হন, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানও সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণের কারণে।
ব্রিকস নেতারা যৌথ বিবৃতিতে জুন মাসে ইরানে মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তারা গাজার ওপর ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ব্রিকস জোটের সম্প্রসারণের ফলে এর কূটনৈতিক প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। জোটটি বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ঊর্ধ্বতন অর্থনৈতিক মন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হার্তার্তো রোববার ব্রাজিলে ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। তাঁর সফরে শুল্ক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ফোর্বসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এর আগেও ব্রিকসের সম্ভাব্য ‘ব্রিকস কারেন্সি’ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি ব্রিকস দেশগুলো এমন কোনো মুদ্রা চালু করার চেষ্টা করে যা ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তাহলে তাঁদের পণ্য আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্প বলেন, “ব্রিকসের কোনো সম্ভাবনাই নেই ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিস্থাপন করার। আর যে কোনো দেশ এমনটি করতে চাইবে, তাদের আমেরিকার সঙ্গে বিদায়ের ঘণ্টা বাজাতে হবে।” তবে ভারতের পক্ষ থেকে ডলারের বিকল্প মুদ্রা চালুর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হুমকি বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন ব্রিকস নিজেদের বহুপাক্ষিক কূটনীতির মঞ্চ হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।