ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফায় লাভবান জনগণের নাভি:স্বাস
*একটা শ্রেণি চায় না পণ্যের দাম কমুক * অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই পণ্যের দাম বাড়ছে।* কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মজুদ করে বা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। * সরকারের অনেক সংস্থা রয়েছে অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া আর কেউ কোনো কাজ করছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও পেঁয়াজের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসে ৩ লাখ ৩২ হাজার টন পাম তেল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। এ সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম। কমেছে পেঁয়াজের আমদানিও। গত তিন মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ টন।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন,ইতোমধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, পাম তেল, চিনি ও গমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি ৯৪ ডলার বেড়েছে। একই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ৫১ ডলার, গমের দাম ১৩ ডলার এবং চিনির দাম টনপ্রতি চার ডলার বেড়েছে। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, পণ্য উৎপাদন খরচের ক্রমাগত উচ্চ মূল্য, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহনের উচ্চ হার, বাজার আধিপত্য ও উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশাধিকার স্বল্প সুযোগ ইত্যাদি কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
ডিসিসিআই সুপারিশ করেছে, মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতা কমিয়ে ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। এ ছাড়া স্থানীয় ও আমদানি করা খাদ্যপণ্যের নগদ মেমোর জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতে সার, তেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোতে ব্যাবসায়ীরা লাভবান হলেও ভোক্তা পর্যায়ে গিয়ে সে সুবিধাটা পৌঁছাচ্ছে না। একটা শ্রেণি চায় না পণ্যের দাম কমুক। এজন্য পণ্যের দাম কমছে না। তারা অতিমুনাফা করার জন্য এটা চায় না। সরকার অনেক পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, আমদানির অনুমতি দিয়েছে, টাক্সফোর্স গঠন করেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে, টিসিবির মাধ্যমে সুলভমূল্যে পণ্য দিচ্ছে। সরকার আর কী উদ্যোগ নেবে? তিনি বলেন, মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই পণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট আছে, যেটা বিগত সরকারও ভাঙতে পারেনি। তখন আমরা মনে করেছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতত আছে দেখে তারা সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে নাই। কিন্তু বর্তমান সরকারের সঙ্গে তো ব্যবসায়ীদের কোনো আঁতাত নেই। তারপরও তারা কারসাজিকারীদের বা সিন্ডিকেট যারা করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি। যদি দুই-একজন ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারতো তাহলে বাজার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসতো বলে আমি মনে করি।
আমরা সবাই জানি সিন্ডিকেট কারা করে, সেক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। সরকার কঠোর হচ্ছে না বিধায় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে, তারা ভোক্তাদের পকেট খালি করার সুযোগ পাচ্ছে। সরকারের অনেক সংস্থা রয়েছে অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া আর কেউ কোনো কাজ করছে না। সিন্ডিকেটের পাশাপাশি কর্পোরেট ব্যবসায়ীরাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মজুদ করে বা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা রীতিমতো ভোক্তাদের লুট করে নিচ্ছে। এটা কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের খারাপ একটা অভ্যাস। একই সঙ্গে পরিবহন ভাড়া নিয়েও কারসাজি করা হচ্ছে। ১৫ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া এখন ২০ হাজার টাকা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের একটু স্বস্তি দিতে পারে টিসিবির পণ্য, সেখানেও দীর্ঘ লাইন, চাহিদার তুলনায় পণ্য কম। এ জায়গায় টিসিবির কার্ডের সংখ্যা ও পণ্য আরও বাড়ানো দরকার
এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব সেলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।