জানা নিউজ

ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অবৈধ রিকশার রাজধানীমুখী দৌরাত্ম্য

রাজধানীর সড়কে যেন চলছে এক অনিয়ন্ত্রিত ও আইনবহির্ভূত যানযজ্ঞ। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া চলাচলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় নেমে এসেছে এক অঘোষিত বিশৃঙ্খলা। দুর্ঘটনা, যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং নাগরিক দুর্ভোগ-সব মিলিয়ে নগর জীবন হয়ে উঠেছে নানামুখী ঝুঁকির মুখোমুখি। বিআরটিএর তথ্য বলছে, চলতি সময় পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। এসবের মধ্যে হাজার হাজার বাস, ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাস রয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করছে লাইটবিহীন, কাচ ভাঙা, মরিচায় ক্ষয়প্রাপ্ত কিংবা জোড়াতালি দেওয়া অবস্থায়। বিশেষত গণপরিবহনগুলোর নাজুক অবস্থা যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আরাম-দুই ক্ষেত্রেই চরম ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ বাসেই নেই ফ্যান, গ্লাস ভাঙা, বর্ষায় পানি পড়ে, এমনকি বসার জায়গাও অস্বস্তিকর। বিগত বছরেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিআরটিএর পক্ষ থেকে ‘নিয়মিত অভিযান’-এর দাবি থাকলেও রাজধানীর সড়কজুড়ে ভাঙাচোরা যানবাহনের উপস্থিতিই বলছে অন্য কথা। এতে শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে না, সরকারের রাজস্ব আয়ও হচ্ছে বিপুলভাবে ব্যাহত। অন্যদিকে, রাজধানীজুড়ে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিপত্য দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় চলছে প্রায় ১২ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা। মূল সড়ক, লিংক রোড, এমনকি ফ্লাইওভার ও অভিজাত এলাকাও রেহাই পাচ্ছে না এই রিকশার দৌরাত্ম্য থেকে। গুলশান, বনানী, নিকুঞ্জ, ধানমন্ডি-প্রত্যেক এলাকাতেই পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেও এ বাহন চলাচল করছে দৃষ্টিকটুভাবে। যাত্রীদের অতিরিক্ত বোঝা বহনের কারণে যানবাহনগুলো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এই অনিয়ন্ত্রিত চলাচল শহরের যানজট পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগস্ট থেকে উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্টন এলাকায় ‘ই-রিকশা’ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এটি একটি আধুনিক উদ্যোগ, তবে বিদ্যমান অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান ছাড়া নতুন যানবাহন যুক্ত করা সড়কের চাপ আরও বাড়াতে পারে। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, নগর ব্যবস্থাপনায় আইন প্রয়োগের ঘাটতি, দুর্বল সমন্বয় এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। রাজধানীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে যেখানে পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা থাকা জরুরি, সেখানে এমন বিশৃঙ্খল চিত্র শুধু জনজীবন নয়, বরং পুরো শহরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সরকার, সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে প্রযুক্তিনির্ভর যানবাহন ট্র্যাকিং, কঠোর মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এ অচলাবস্থার অবসান ঘটানো জরুরি।