পাকিস্তানে বিপুল ভোটে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত ইমরান খানের দল পিটিআই-এর এমপি সোহেল আফ্রিদি। বিরোধীদের বর্জনের মধ্যেই গতকাল খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে সোহেল আফ্রিদিকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়েছে। তবে অধিবেশন চলাকালে পদত্যাগ করা মুখ্যমন্ত্রী পিটিআই-এর আলি আমিন গান্ডাপুরের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। অধিবেশন পরিচালনা করেন কেপি প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার বাবর সলিম স্বাতি। বিরোধী দলীয় এমপিএদের বর্জনের মধ্যেও তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। স্পিকার ঘোষণা করেন, বিরোধী দল মনোনীত তিন প্রার্থী-জামিয়াত উলেমা ইসলাম (জেইউআই-এফ)-এর মাওলানা লুতফুর রহমান, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর সারদার শাহ জেহান ইউসুফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-এর আরবাব জরাক খান-কোনও ভোটই পাননি। তিনি আরও জানান, তিনজন প্রার্থী বিদেশে অবস্থান করছেন। পরে স্পিকার ঘোষণা দেন, সোহেল আফ্রিদি ৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে জিততে হলে তার ন্যূনতম ৭৩ ভোট প্রয়োজন ছিল। ফল ঘোষণার আগে স্পিকার সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরীর উদ্দেশে বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখোয়া এখনো সেনাদের শ্রদ্ধা করে, কারণ তারা প্রদেশের নিরাপত্তায় জীবন দিচ্ছেন। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিষদ পরিচালনা করতে পারে না। অ্যাসেম্বলিই এই প্রদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বের জায়গা।’ বিজয়ী ঘোষণার পর বক্তৃতায় সোহেল আফ্রিদি বলেন, তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তিনি এমন একজন সাধারণ কর্মীকে বেছে নিয়েছেন, যার নামের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক তকমা, বংশপরিচয় জড়িত নয়। ‘আমার নামের শেষে ভুট্টো, জারদারি কিংবা শরিফ নেই,’-বলে গর্জে ওঠেন আফ্রিদি। তিনি জানান, তিনি উপজাতীয় জেলা থেকে এসেছেন এবং তা নিয়ে তিনি গর্বিত। আফ্রিদি বলেন, গত ৭৮ বছর ধরে উপজাতীয় এলাকা সম্পর্কে একটি মানসিকতা চালু রয়েছে-যেন এই অঞ্চলের মানুষ কেবল মৃত্যুর জন্যই বেঁচে আছে, তাদের সর্বদা পশ্চাতে রাখাই যেন নিয়তি। তিনি বলেন, ইমরান খান এ বঞ্চনার বিষয়টি গভীরভাবে জানেন। ‘তাকে যতবার ধন্যবাদ দিই, ততবারই তা যথেষ্ট মনে হয় না।’ আফ্রিদি আরও বলেন, ‘আমার নেতা ইমরানের দর্শন অনুযায়ী, কেউ কেবল শরিফ, ভুট্টো বা জারদারি নাম যুক্ত করলেই নেতা হয়ে যায় না।’ তিনি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গান্ডাপুরের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, ‘আলি ভাই, আপনি যেভাবে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন, তা প্রশংসনীয়।’ নিজেকে ‘প্রতিবাদের রাজনীতির চ্যাম্পিয়ন’ বলে আখ্যা দিয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘আমার হারানোর কিছু নেই-গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, ধনসম্পদের লোভও নেই। যেদিন আমার নেতা বলবেন সরে দাঁড়াতে, আমি এই চেয়ার লাথি মেরে সরিয়ে দেব।’ পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলি খান আফ্রিদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, উপস্থিত সব এমপিএ ভোট দিয়েছেন। আশা করি শপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে। আমি বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্ডাপুরকে শ্রদ্ধা জানাই এবং আফ্রিদিকে অভিনন্দন জানাই।’