জানা নিউজ

জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে যখন শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করা হয়েছে।

রিটটি দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন। তিনি ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, অনিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়ার অভিযোগে ভিপি প্রার্থী তালিকা থেকে তাকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও জাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস ইতোমধ্যেই উৎসবমুখর। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ বার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এক বছর পর, ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংঘর্ষ বাধে, এরপর জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে প্রশাসন। সেই থেকে টানা ৩৩ বছর ধরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১০ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৯ জন। এর বাইরে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যেই অন্তত ৭টি প্যানেল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থি সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোটের একাংশ সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের ধারণা, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, বাম সংগঠনগুলোর ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর মধ্যে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আলোচনায় আছেন।

নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের আবেদন জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার এ কে এম রাশিদুল আলম জানিয়েছেন, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে রিট দায়ের হওয়ায় নির্বাচনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ রিট আইনি ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। আবার কেউ কেউ এটিকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখছেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তবে পরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে, ফলে নির্ধারিত সময় ৯ সেপ্টেম্বরেই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।