জানা নিউজ

ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের সম্মতি, চূড়ান্ত নির্দেশে অপেক্ষা

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৭ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছে একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম। তবে এখনো পর্যন্ত তিনি চূড়ান্ত হামলার নির্দেশ দেননি।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ব্লুমবার্গ, সিবিএস নিউজ ও আল-জাজিরা-র খবরে বলা হয়, ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন যে, ইরান যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক হামলার পথে যেতে পারে। তবে হামলার আগে তিনি ইরানের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই দোলাচলের নেপথ্যে রয়েছে তেহরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা। পাহাড়ের নিচে সুদৃঢ়ভাবে নির্মিত এই স্থাপনাটি এতটাই গভীরে অবস্থিত যে সাধারণ অস্ত্রে এর ওপর হামলা কার্যকর নয়। এটি ধ্বংস করতে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী বোমা। এই কারণে ইসরায়েলের এককভাবে এই লক্ষ্যবস্তুতে হামলা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের নির্দেশের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

১. পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি নতুন ডেস্ট্রয়ার পাঠানো

২. আরব সাগরের দিকে দ্বিতীয় একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ মোতায়েনের প্রক্রিয়া

৩. পেন্টাগনের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির ঘোষণা

পেন্টাগনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই মোতায়েন প্রতিরক্ষামূলক হলেও তা ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলার জন্য মার্কিন বাহিনীকে ভালো অবস্থানে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এই সম্ভাব্য হামলা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পকে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ‘সর্বাত্মক হামলা’ চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন এই যুদ্ধের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে।

প্রতিবাদকারীদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে সরাসরি না জড়ায়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ইরান কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না”। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এর ফলাফল হবে “অপূরণীয় ক্ষতি”।

এদিকে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) এক বিবৃতিতে জানায়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—এমন কোনো প্রমাণ তাদের হাতে নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা হতে পারে একটি কূটনৈতিক চাপের কৌশল, যাতে তেহরান আরও ছাড় দেয়। আবার এটা হতে পারে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতির ইঙ্গিত।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইরানে হামলা করতে পারি, আবার নাও করতে পারি।” তিনি উল্লেখ করেন, “আগামী সপ্তাহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ—সম্ভবত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে।”