জানা নিউজ

অপ্রয়োজনে লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব, নিরপেক্ষ ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে দৃঢ় বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ২৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাজধানীর রাজারবাগে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার, আন্তরিকতা ও সেবার মানসিকতা দিয়েই মানুষের মন জয় করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন কোনো ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “অপ্রয়োজনে লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না। আইন প্রয়োগে সংবেদনশীলতা ও ধৈর্য থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পুলিশকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনোভাবেই ঘুষ বা ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়া যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার বিকল্প নেই।”

তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন থানা ও ইউনিট পরিদর্শন করেছেন এবং পুলিশ সদস্যদের বাস্তব সমস্যাগুলো সরাসরি অবলোকন করেছেন। এসব সমস্যার সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সভায় পুলিশ বাহিনীর অবকাঠামোগত দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অধস্তন সদস্যদের আবাসন ও খাদ্যসংকট এখনো অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। থানার জন্য ২০০টি নতুন পিকআপ ভ্যান কেনার প্রক্রিয়া চলছে, যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে।

পুলিশের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব বিবেচনায় ঝুঁকি ভাতার সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ঝুঁকি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সিলিং তুলে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাতে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত কর্মকর্তা বেশি হারে ভাতা পান।”

এছাড়াও, পুলিশ সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয়ের সহজঋণ সুবিধা চালু করার পরিকল্পনার কথাও জানান উপদেষ্টা। প্রাথমিক পর্যায়ে এসআই ও এএসআইদের এই সুবিধা দেওয়া হবে, এবং সরকার যেন ঋণের সুদের অংশ পরিশোধ করে—সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে।

উপদেষ্টা জানান, বর্তমান অপরাধপ্রবণতার ধরন ও মাত্রা বিবেচনায় পুলিশ সদস্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পদায়নের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি আইজিপিকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় উল্লেখযোগ্য একটি ঘোষণায় তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ই যদি পুলিশ সদস্য হন, তাহলে তাদের একই জেলায় পদায়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়াও, অধস্তন সদস্যদের নিজ জেলার কাছাকাছি পদায়নের বিষয়েও চিন্তা করছে সরকার।

সভায় পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রাতে টহলরত সদস্যদের নিরাপত্তায় তাঁবু স্থাপন ও ট্রাফিক বক্স নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম এবং ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইজিপি।