জানা নিউজ

জাকসু নির্বাচন বর্জন করল ছাত্রদল

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোট চলাকালেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, “মেয়েদের হলে একই মেয়ে একাধিকবার ভোট দিয়েছে। শিবিরপন্থী সাংবাদিকরা অসদাচরণ করেছেন আমাদের প্রার্থীদের সঙ্গে। এই প্রহসনের নির্বাচনে আমরা থাকতে পারি না।”

এর আগে ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভোট দেওয়ার কালি মুছে যাওয়ায় এবং একটি ব্যালট পেপার মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখায় ভোট দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় ভোট বন্ধ থাকে। ছাত্রদলের অভিযোগ, তাদের ভিপি প্রার্থীকে একটি হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং অধিকাংশ হলে প্যানেলের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি।

জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী আরও বলেন, “প্রশ্ন উঠেছে কেন প্রশাসন শতকরা ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যালট ছাপিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকে ছাপানো ব্যালটের একটি অংশ শিবিরের হাতে পৌঁছেছে।”

একই অভিযোগ তুলেছেন ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান। তার দাবি, প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে জেতানোর জন্য ফ্যাসিবাদী কায়দায় শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে।

ছাত্রদলের লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাদের প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, অমোছনীয় কালি ব্যবহার না করায় একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় কারচুপির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং কিছু হলে ভোটারদের তুলনায় বুথ কম থাকায় ভোগান্তি হয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭ জন। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল। তবে শেষ সময়ে বিভিন্ন হলে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৮ জন প্রার্থী।

এই নির্বাচনে ছাত্রদল ছাড়াও অংশ নেয় ছাত্রশিবির, বামধারা ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে মোট আটটি প্যানেল। ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শেখ সাদী হাসান এবং জিএস পদে লড়েন তানজিলা হোসেন বৈশাখী। অপরদিকে বাগছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং জিএস পদে আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি প্রার্থী ছিলেন আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম।

ভোটগ্রহণ শেষে গণনা করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে এবং সেখানেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল। তবে ছাত্রদলের বর্জনের কারণে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ইতিমধ্যেই তীব্র আকার ধারণ করেছে।