যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টার দীর্ঘ বিমান অভিযানে হামলা চালিয়েছে। শনিবার (২১ জুন) এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে মার্কিন সরকার এবং একাধিক সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান কেন্দ্রিক এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত সরাসরি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফ্রন্টে যুক্ত হলো।
নিউইয়র্ক টাইমস সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ঘাঁটি থেকে ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান একযোগে উড্ডয়ন করে। বিমানগুলো প্রায় ৩৭ ঘণ্টা একটানা উড়ে ইরান পর্যন্ত পৌঁছায় এবং আকাশে একাধিকবার জ্বালানি গ্রহণ করে।
এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা জিবিইউ-৫৭। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়,
• ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ছোড়া হয় ১২টি জিবিইউ-৫৭ বোমা,
• নাতাঞ্জ কেন্দ্র লক্ষ্য করে ২টি বোমা ফেলা হয় একটি বি-২ বিমানের মাধ্যমে,
• এছাড়া নাতাঞ্জ ও ইসফাহান কেন্দ্রের দিকে মার্কিন সাবমেরিন থেকে ছোড়া হয় ৩০টি টিএলএএম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন,
“এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ সক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। আমরা প্রতিরক্ষার জন্য যা জরুরি, তাই করেছি।”
তিনি ইরানকে কূটনৈতিক পথে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেন— তা না হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তেহরান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, যেসব পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। ফলে সেখানে কোনো পারমাণবিক উপাদান ছিল না এবং বিকিরণের কোনো ঝুঁকিও তৈরি হয়নি।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই হামলা একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ আরও জটিল হতে পারে এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথ সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।