জানা নিউজ

প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল তেহরান * ইসরাইলের আকাশ ইরানের নিয়ন্ত্রণে

বিপজ্জনক আগামী ২৪ ঘণ্টা

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে কে কখন ছারখার হয় বলা মুশকিল। অন্তত আগামী ২৪ ঘণ্টায় এর কোনো পূর্বাভাস নেই। ‘নাটের গুরু’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজেই এই ‘বিপজ্জনক’ ইঙ্গিত দিয়েছেন পৃথিবীর কানে। কানাডার জি-সেভেন সম্মেলন শেষের আগেই ফেরার পথে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোঝা যাবে ইসরাইলের হামলার গতি কমবে না বাড়বে।’ সে হিসাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা কতটা ভয়ংকর হবে; কতটা লোমহর্ষক হবে তার ‘দিকদিশা’ নেই। তবে দমকা হাওয়া লাগা যুদ্ধ-আগুনের আঁচ যে কোনো মুহূর্তে আগ্নেয়গিরির মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মরু রাজনীতিতে তা স্পষ্ট। ট্রাম্পের গত দুদিনের উত্তপ্ত কয়েক দফা পোস্ট-বিবৃতিতে সেই লক্ষণই আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ইসরাইল নয়-যুদ্ধ যেন যুক্তরাষ্ট্রই করছে। মঙ্গলবারের আরেক পোস্টে প্রথমবারের মতো সেই গোমরই ফাঁস করলেন ট্রাম্প। বললেন, ‘ইরানের আকাশ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’ পরক্ষণেই বললেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন আমরা জানি। কিন্তু তাকে আমরা এখনই হত্যা করব না।’ তারপরই আবার বললেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে ইরানকে।’ অর্থাৎ যুদ্ধ এখন আর ইসরাইলের সঙ্গে নেই। নিঃসঙ্গ ইরানের প্রতিপক্ষ বিশ্ব বিশৃঙ্খলার খলনায়ক যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। সে হিসাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা দূর কি বাত-একটু পর কী ঘটতে যাচ্ছে; কী হবে তা পুরোটাই ধোঁয়াশায়! বড় যুদ্ধের এমন টানটান দশার মধ্যেই সমানে একে অন্যের ভূখণ্ডে হামলা-পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইরান-ইসরাইল। সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে এদিন প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, বুধবার ভোরে অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রির একাদশ পর্যায়ে উন্নত ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সফলভাবে বহুল আলোচিত ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইসরাইল এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। ইসরাইলের আকাশের ওপরও নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানিয়েছে ইরান। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রির মুখপাত্র কর্নেল ইমান তাজিক বলেছেন, ‘মঙ্গলবার রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে এটা প্রমাণিত ইসরাইলের আকাশের ওপর আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ পালটা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলও। তেহরান থেকে ৪০ কিমি. দূরের আলবোর্জ প্রদেশের রাজ শহরের পায়াম বিমানবন্দরের কাছে হামলা চালায়। এর আগেও এই বিমানবন্দরটিই ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। তেহরানের পূর্বাঞ্চল থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে এখন পর্যন্ত এসব বিস্ফোরণের লক্ষ্যবস্তু বা ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এদিন দাবি করেছেন, তাদের যুদ্ধবিমান ইরানি সরকারের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দপ্তর’ ধ্বংস করেছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত দেশটির ১১শ লক্ষ্যবস্তুতে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, ইরানে এ পর্যন্ত ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০০ ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরাইলি চ্যানেল ১২-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তেহরান ও আশপাশে ইরানের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বিমানবাহিনী। তবে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো এই দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। খবর আলজাজিরার।

বুধবার এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে আইএইএ জানায়, ইরানি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র টিইএসএ কারাজ ও তেহরান রিসার্চ সেন্টারে হামলা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রই এক সময় আইএইএর নজরদারির আওতায় ছিল। এর আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করে, ৫০টির বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের ৪০টি লক্ষবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রসহ একাধিক অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা নির্দেশনার ভিত্তিতে এই হামলা চালানো হয়।

দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলার বিষয়ে ইরানের দিক থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস বলছে, ইরানজুড়ে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১ হাজার ৩২৬ জন। খবর আলজাজিরার। সংগঠনটি বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। ইসরাইলি হামলায় হতাহতের বিষয়ে সর্বশেষ সোমবার তথ্য জানিয়েছে ইরান সরকার। দেশটির সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২২৪। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ। খবর আলজাজিরার।

চলমান সংঘাতে ইরান সরকার নিয়মিত হতাহতের তথ্য প্রকাশ করছে না। সবশেষ সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল সোমবার। সেই তথ্য অনুসারে, ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।