‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে ব্যাপক আকারে ইসরাইলে হামলা চালায় ইরান।
মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও ভবিষ্যতের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছে তেহরান
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। ইসরায়েলের পূর্ববর্তী হামলার জবাবে পাল্টা ব্যাপক মিসাইল হামলা চালানোর পর ইরান ঘোষণা দিয়েছে, এ অভিযান এখানেই শেষ নয়—এখনও চলবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক প্রতিশোধ। একইসঙ্গে, মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও ভবিষ্যতের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছে তেহরান।
শুক্রবার (১৩ জুন) দিবাগত রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে ব্যাপক আকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর মতে, আহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও বয়স্করাও।
এদিকে ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই হামলা চালিয়েছে। ইরানি সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ও প্রযুক্তি অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে, ইরানের রাজধানী তেহরানসহ গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হন।
বেসরকারি সূত্রের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, এই হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী শনিবার (১৪ জুন) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে। টেলিগ্রামে দেওয়া ঘোষণায় জানানো হয়, ইরানের এমন সব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে, যা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের উদ্দেশ্য—ইসরায়েলের জন্য সবরকম হুমকি নির্মূল করা।’
এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক চিঠিতে এই হামলাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত শুধু দুই দেশের সীমায় আটকে নেই—এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশেষত ইরান যখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার হুঁশিয়ারি দেয়, তখন তা আরও বিপজ্জনক রূপ ধারণ করতে পারে।
ইতিমধ্যে ইসরায়েল তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিসাইল উৎক্ষেপণ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয় এবং বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামে।