জানা নিউজ

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল

জিলহজ মাস ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এ মাসটি যেমন হজর মাস, তেমনি কুরবানি, তাকওয়া, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য সুযোগও বটে। ইসলাম ধর্মে জিলহজ মাসের রয়েছে গভীর তাৎপর্য ও অফুরন্ত ফজিলত। বিশেষ করে প্রথম দশ দিন সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। এ মাসে বিশেষ কিছু ইবাদত ও আমল করা মুস্তাহাব (সুন্নাত ও অধিক সওয়াবের কাজ) হিসেবে গণ্য হয়। নিচে কিছু মুস্তাহাব আমল তুলে ধরা হলো।

১. জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ শপথ ফজরের এবং দশ রাতের। (সুরা ফাজর: ১-২) অধিকাংশ মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন, দশ রাত দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ রাত/দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনু কাসির)

২. এই দশ দিনে নেক আমলের গুরুত্ব
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ما من أيام العمل الصالح فيها أحب إلى الله من هذه الأيام يعني أيام العشر قالوا: يا رسول الله، ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال: ولا الجهاد في سبيل الله إلا رجل خرج بنفسه وماله، فلم يرجع من ذلك بشيء আল্লাহর নিকট নেক আমল করার জন্য বছরের কোনো দিন জিলহজের প্রথম দশ দিনের চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও না? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হয়ে আর কিছুই ফিরে আনেনি (শহিদ হয়েছে) (সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

৩. তাকবির (তাশরিকের তাকবির)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ: فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد তোমরা এই দশ দিন বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো। (মুসনাদু আহমদ: ৫৪৪৬)

তাশরিকের তাকবির:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد জিলহজ মাসের নয় তারিখে ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার এই তাকবির পড়া ওয়াজিব।

৪. রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ-আরাফার দিন)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ، فَقَالَ يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ আরাফার দিন (৯ জিলহজ) রোজা রাখলে বিগত বছরের ও আগামি বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৫. কুরবানি করা (১০ জিলহজ-ইদের দিন ও তৎসংলগ্ন ২ দিন)
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কুরবানি করো। (সুরা কাউসার:২)

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, قال رسول الله ﷺ: ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم মানুষের কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির দিনের রক্ত ঝরানোর চেয়ে অধিক প্রিয় নয় (তিরমিজি:১৪৯৩)

৬. কুরবানি করার নিয়তে চুল-নখ না কাটা
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
قال رسول الله ﷺ: إذا رأيتم هلال ذي الحجة، وأراد أحدكم أن يضحي، فليمسك عن شعره وأظفاره যে ব্যক্তি কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)

৭. অধিক পরিমাণে ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত ও দান-সদকা করা
এই দিনগুলোতে সাধারণভাবে সকল নেক আমলের ফজিলত বেড়ে যায়।
১. নফল নামাজ
২. কুরআন তিলাওয়াত
৩. দান-সদকা
৪. জিকির-আসকার
৫. ইস্তিগফার
৬. সালাতুত তাসবিহ

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত ও ফজিলতের সময়। আমরা যেন এই দিনগুলোকে গাফলতির মধ্যে কাটিয়ে না দিই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এগুলোতে অধিক ইবাদত, জিকির, রোজা, তাকবির ও কুরবানির মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে গঠন করি। আমিন