নাট্য ও কমেডি অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিককে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টো রোডে মারধর শেষে রমনা থানায় সোপর্দ করেছে একদল যুবক। এই ঘটনায় সিদ্দিকের ছেঁড়া জামাকাপড়, কান্নার ভিডিও এবং ঘটনাস্থলে স্লোগান দেওয়া দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ঘটনাটি দেশের শোবিজ অঙ্গনে ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রমনা থানার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিদ্দিককে আটক করে রাস্তায় মারধর করে থানার দিকে নিয়ে যান। তারা দাবি করেন, সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দোসর এবং জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি। ভিডিওতে তাদেরকে “আওয়ামী লীগের দালালকে পুলিশের হাতে তুলে দিলাম” জাতীয় স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন ভিডিও ধারক ধারাবিবরণীতে বলেন, “সিদ্দিক আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে, তাই আমরা জনগণের পক্ষ থেকে তাকে হস্তান্তর করছি।” ভিডিওতে দেখা যায়, মারধরের একপর্যায়ে সিদ্দিক কান্নাকাটি করছেন এবং তার জামাকাপড় ছিঁড়ে গেছে।
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আতিকুল আলম জানান, “জনতা সিদ্দিককে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।” তবে রমনা জোনের ডিসি জানিয়েছেন, সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি হত্যা মামলার রেকর্ড রয়েছে, ফলে তদন্তের স্বার্থে তাকে ওই থানায় হস্তান্তর করা হবে।
সিদ্দিক অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি গুলশান ও টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সর্বশেষ ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনে আলোচনায় আসেন তিনি, যদিও দলীয় টিকিট পাননি।
একইসঙ্গে জানা যায়, সম্প্রতি গুলশানের শাহজাদপুরে এক বন্ধু জামিল আহমেদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সিদ্দিক। বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গেলে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। পরে জামিলের সহায়তার অভিযোগ তুলে তার বাসায় হামলা চালানো হয়, যদিও সেখানে ভুল করে জামিলের ভাই আনোয়ার হোসেন কুডুকে মারধর করা হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, আইনের হাতেই অপরাধীকে তুলে দেওয়া উচিৎ, কারো হাতে নয়। অন্যদিকে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একজন পরিচিত শিল্পীকে প্রকাশ্যে মারধর করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না।