ছয় দফা দাবিতে তীব্র আন্দোলনে নেমেছে দেশের পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো আদায়ে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সারা দেশের মতো রাজধানীতেও রাস্তায় নেমেছিলেন তারা। আট ঘণ্টার সড়ক অবরোধ শেষে ঘোষণা দিয়েছেন—পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দেশব্যাপী ‘রেল ব্লকেড’ করবেন।
রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে সন্ধ্যায় ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর তেজগাঁও, সাতরাস্তা ও শিল্পাঞ্চল এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ করায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও চালকেরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো সমাধান না আসায় এবার তারা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আর সচিবালয়ে যাবেন না; দাবি আদায়ের জন্য প্রশাসনকে এবার শিক্ষার্থীদের কাছেই আসতে হবে।
ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিবিদ, কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনের আচরণ বারবার আমাদের মর্যাদাহানিকর অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে। এই লড়াই শুধু আমাদের না, দেশের ভবিষ্যতের জন্য।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মূল বিষয়গুলো হলো:
১. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর ইস্যু: অবৈধভাবে পদোন্নতি পাওয়া ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের প্রমোশন ও পদবি বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. মানসম্মত কারিকুলাম ও ভর্তির নিয়ম: উন্নত বিশ্ব অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম চালু, একাডেমিক কার্যক্রম ইংরেজি মাধ্যমে করা এবং যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল।
৩. চাকরিতে বৈষম্য দূরীকরণ: ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত পদে নিম্ন পদের নিয়োগ বন্ধ ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা।
৪. কারিগরি সেক্টরে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার: বোর্ড ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত ব্যক্তিদের নিয়োগ বন্ধ এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিতকরণ।
৫. স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও সংস্কার কমিশন: একটি পৃথক ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ গঠন ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ স্থাপন।
৬. উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ: পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তাদের জন্য ভর্তি সুযোগ নিশ্চিত করা।
সড়ক ছাড়লেও আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ অবরোধ করবে তারা। এতে বড় ধরনের ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্দোলনটির নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা আশা করি সরকার আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।”