ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়ালে সমুচিত, কঠোর ও আনুপাতিক জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূত আলি বাহরেইনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত ও সহানুভূতিশীল মনে করছি। যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তাদেরকেও একইভাবে জবাব দেওয়া হবে।”
ইরানের এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময় এল, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি হামলা-পাল্টা হামলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল আচমকা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে গত ছয় দিন ধরে ইরানও পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় তারা এই হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে আগ্রহী নয়।
এই প্রেক্ষাপটে ইরান সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি হামলায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেটিকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। যদিও ইরান এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলেনি, ঠিক কোন কোন পদক্ষেপকে তারা উসকানি হিসেবে গণ্য করবে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি বাহরেইনি বলেন, “আমি নিশ্চিত আমাদের সামরিক বাহিনী যথাযথ, সমানুপাতিক এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাব।”
এদিকে মার্কিন প্রশাসনের অন্তত তিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। তারা এখনো সরাসরি হামলায় অংশ না নিলেও ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করতে ইসরায়েলকে পরোক্ষ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও ইরানবিরোধী কড়া অবস্থান নিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তিনি ইরানকে “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ” করার আহ্বান জানান। এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন আলি বাহরেইনি। তিনি বলেন, “ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত বৈরি ও অযৌক্তিক। এগুলো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এসব মন্তব্য আমরা আমাদের মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছি।”
এদিকে ইরানের সাবেক অর্থমন্ত্রী এহসান খান্দুজি হরমুজ প্রণালীতে তেহরানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহণ রুট। এখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ। প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত।
কান্দুজি বলেছেন, “এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যেন ইরানের অনুমতি ছাড়া কোনো ট্যাংকার বা এলএনজিবাহী জাহাজ এই প্রণালী অতিক্রম করতে না পারে। এই নীতি আগামীকাল থেকে ১০০ দিনের জন্য কার্যকর করা উচিত।” তিনি ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় এ নীতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা গেলে তার ‘মারাত্মক প্রভাব’ পড়বে এবং তা দেরিতে কার্যকর করা মানে দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া।
উল্লেখ্য, অতীতেও ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিলেও বাস্তবে কখনো তা কার্যকর করেনি। এবারের মন্তব্য তাদের অবস্থান নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
রয়টার্স এই বিষয়ে ইরানের তেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাইলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।