রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন আর অপরাধ আর অনিয়মের আখড়া না হয়—এমন প্রত্যাশায় অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনার বিরুদ্ধে বৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সাম্প্রতিক এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র ও ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এই নির্মম ঘটনার পর ছাত্রসমাজ, শিক্ষক এবং সাধারণ নাগরিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা। এমন চাপের মুখে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে অংশ নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ থানা পুলিশ এবং আনসার বাহিনী। সরেজমিন দেখা গেছে, টিএসসি-সংলগ্ন উদ্যানের ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের বেশ কয়েকটি অংশে স্থাপিত শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান, ঝুপড়ি ও অবৈধ কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দুটি বুলডোজার ব্যবহৃত হয় এ অভিযানে। পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের উপস্থিতিতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই চলে উচ্ছেদ কার্যক্রম।
অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। তাদের বক্তব্য, তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হলেও তাদের জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। এক দোকানি বলেন, “আমাদের দোকান দিয়েই সংসার চলে। অপরাধ তো বাইরের লোক করেছে, আমাদের দোষ কী?”
উত্তরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় এই উদ্যানকে অপরাধমুক্ত, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে এটি জরুরি পদক্ষেপ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে উদ্যানকে সবার জন্য নিরাপদ রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি জাতীয় সম্পদ, এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।”
ঘটনার পর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে সাত দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. টিএসসি-সংলগ্ন ফটক স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
২. অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক নির্মূল ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে যৌথ অভিযান।
৩. নিয়মিত নজরদারির জন্য কমিটি গঠন।
৪. পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন।
৫. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের জন্য ডেডিকেটেড বক্স স্থাপন।
৬. রমনা পার্কের মতো শৃঙ্খলিত ব্যবস্থাপনা চালু।
৭. রাত ৮টার পর জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।
এই উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে একটি নিরাপদ ও উপভোগ্য উন্মুক্ত স্থানে রূপান্তরের প্রত্যাশা করছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।