জানা নিউজ

সরকারি চাকরিজীবীদের আন্দোলনে সচিবালয়ে প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সচিবালয়ের ৪ নম্বর প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজারো কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ের ভেতর ও আশপাশে অবস্থান নেন তারা। আন্দোলনকারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘নিবর্তনমূলক’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ২৫ মে সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে, যেখানে চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করার বিধান রাখা হয়।

এই অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৪ মে থেকে লাগাতার বিক্ষোভে নামেন। ঈদের ছুটি শেষে ১৬ জুন থেকে ফের বিক্ষোভ জোরদার হয়। আন্দোলনরতরা বলছেন, নতুন এই আইনে চাকরির নিরাপত্তা খর্ব হবে এবং কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে কর্মচারীরা মিছিল শুরু করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে তারা ৪ নম্বর ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সচিবালয় এলাকা।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা, যাদের মধ্যে কো–চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর, মো. নুরুল ইসলাম ও কো–মহাসচিব নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মচারীরা দাবি করছেন, শুধুমাত্র সংশোধন নয় — এই অধ্যাদেশ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে। কর্মচারী নেতা মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “প্রজ্ঞাপন সম্পূর্ণ বাতিল চাই; সংশোধন নয়। আমরা এই কালো আইন মানব না।”

কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর ঘোষণা করেন, “আমরা আশা করছি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া হবে। অন্যথায় রোববার (২২ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে আরও বড় ধরনের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

চাকরি অধ্যাদেশ ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা ও বিক্ষোভ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে প্রধান করে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। কমিটি ইতিমধ্যে দুই দফা বৈঠক করলেও এখনো চূড়ান্ত কোনো সুপারিশ জানায়নি। আন্দোলনকারীরা এই দেরিকে সময়ক্ষেপণ হিসেবে দেখছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।

বিক্ষোভকারী কর্মচারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে এই আন্দোলন শুধু সচিবালয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না — তা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশের সরকারি অফিসে। আন্দোলনরতদের কথায়, “আমরা আন্দোলনে থাকতে চাই না, বরং কাজ করতে চাই। দাবি পূরণ করলেই আমরা কাজে ফিরে যাব।”