সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ওই লক্ষ্যে নানা কারসাজি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এরই মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে বিষয়টি লিখিত জানিয়েছে। ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে ট্যারিফ কমিশনে ওই বিষয়ে চিঠি দিয়ে ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর করার কথা বলে। কিন্তু সরকারি ছুটি থাকায় ওই সময়ের মধ্যে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ সরকারের থাকছে না। আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়াকে দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজার এবং ট্যারিফ কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সয়াবিন তেলের দাম সরকারের অনুমোদন ছাড়া বৃদ্ধি বেআইনি। কিন্তু ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ওই আইনের তোয়াক্কা করছে না । বিগত সরকারের সময় দফায় দফায় এভাবে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে না জানিয়েও দাম বাড়ানো হয়েছে। আর এবার সরকারের দেয়া শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াকে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। অথচ গত মাসেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ে অব্যাহত শুল্ক-কর রেয়াত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। এর মধ্যে শেষ কর্মদিবসে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হলেও আগের মতোই থাকবে সয়াবিন তেলের দাম। আর শুল্ক-কর রেয়াতের সুবিধা উঠে গেলে আমদানি খরচ বাড়ায় তখন দামও বাড়বে। শুল্ক-কর রেয়াতের কারণে ভোজ্যতেল আমদানিতে কোম্পানিগুলোর প্রতি লিটারে ১১ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু এখন শুল্ক-কর রেয়াত উঠে যেতেই ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ শুল্ক-করের খেলায়ও কোম্পানিগুলো লিটারে ৭ টাকা বাড়তি মুনাফা করতে চায়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অজুহাত, শুল্কছাড়ের সুবিধা উঠে গেলে কোম্পানিগুলো লোকসানে পড়বে। কারণ বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। তাছাড়া বিশ্ববাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরো কয়েক মাস থাকবে। সবকিছু মিলিয়েই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কিছুটা বাড়িয়ে করা হয়েছে। কারণ একবার দাম বাড়ালে কয়েক মাস আর বাড়ানো সম্ভব হবে না। সয়াবিন তেলের এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের খরচ বাড়বে।
সূত্র আরো জানায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা। আর আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৩ টাকা। ওই হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩৫ টাকা। একইভাবে খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে লিটারপ্রতি ১৭০ টাকা। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দাম লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা। ওই হিসাবে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা।
এদিকে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রাজ্জাক জানান, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা নিজেরা কার্যকর করলে তা সরকার অনুমোদিত হবে না। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বৈঠক করে অনুমোদন করা হয়। যা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। দাম সহনীয় রাখতে গত ১৫ ডিসেম্বর সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। তবে ওই সময় কিন্তুকোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম কমায়নি। বরং সে সময় বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।