প্রেম আর বিচ্ছেদ-দুটি শব্দই শোবিজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রূপালি পর্দার ঝলকানো হাসির আড়ালেও থাকে ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েন। সম্পর্ক গড়া যেমন বাস্তব, তেমনই বাস্তব সেই সম্পর্কের ভাঙন। বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনেও এমন অনেক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটেছে, যা নিয়ে সরগরম থেকেছে আলোচনা। সেইসব আলোচিত কয়েকটি বিচ্ছেদের গল্প নিয়েই এই আয়োজন।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সংগীতের ভুবনে সাফল্যের সঙ্গে পথ চলছেন দিলশাদ নাহার কনা। স্টেজ, প্লেব্যাক, টিভি-সব ক্ষেত্রেই তার কণ্ঠে সুরের জাদুতে মুগ্ধ শ্রোতা। ‘দুষ্টু কোকিল’ গানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক আলোচনায় থাকা কনার ব্যক্তিগত জীবনেও নেমেছে বিচ্ছেদের ছায়া। কনা নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। তিনি লিখেছেন, গত বৃহস্পতিবার তিনি এবং গোলাম মোহাম্মদ ইফতেখার গহিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করেছেন। হঠাৎ সামাজিক মাধ্যমে কনার এই ঘোষণা শোবিজে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা মাহিয়া মাহি ভালোবেসেই সংসার শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ী রাকিবের সঙ্গে। ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয় এবং সেই সংসারে আসে এক পুত্রসন্তান। রাজনীতির মঞ্চেও যখন মাহি এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন স্বামী রাকিব তার পাশে ছিলেন। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও এক ছাদের নিচে টিকল না তাদের সংসার। গত শুক্রবার মাহি তাদের বিচ্ছেদের খবর জানিয়ে দেন। এর আগেও মাহির ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের ওঠাপড়া দেখা গেছে, কারণ রাকিবের আগেই তিনি বিয়ে করেছিলেন পারভেজ মাহমুদ অপুকে, যা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। মাহির এই বিচ্ছেদ ঢালিউডে ছিল আরেকটি বড় আলোচনার বিষয়।
অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ এবং সংগীতশিল্পী এসআই টুটুলের সম্পর্কও একসময় শোবিজের আইকনিক জুটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২৩ বছরের দীর্ঘ দাম্পত্যের পরও সেই সম্পর্কের ভিত ভেঙে পড়ে। তাদের সন্তান ইতিমধ্যেই বড় হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, তারা সুখেই আছেন। কিন্তু বাস্তবে টানাপোড়েন চলছিল দীর্ঘদিন। দুজনে আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন এবং প্রায় দুই বছর আগে তাদের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে। বর্তমানে টুটুল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং তানিয়া আহমেদও আছেন সেখানেই, যদিও তাদের পথ এখন আলাদা।
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত জুটি ছিলেন পরীমনি এবং শরিফুল রাজ। ‘গুণিন’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়েই নাকি শুরু হয় তাদের প্রেম। সেখান থেকে সম্পর্ক গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত এবং আসে এক পুত্রসন্তান। একসময় তাদের একসঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিতি দর্শক-আয়োজকদের চমকে দিত। সবাই ভাবতেন, সুখেই আছেন তারা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরীমনির পক্ষ থেকে শোনা যেতে থাকে, রাজ নাকি পরিবার এবং সন্তানের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছেন না। মাঝে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা হলেও শেষমেশ ভাঙন আটকানো যায়নি। তাদের পথ দুই দিকে বেঁকে যায়।
ঢাকাই সিনেমার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিচ্ছেদ হচ্ছে জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমার সংসার জীবনের ইতি টানা। ২০০৭ সালে পূর্ণিমা বিয়ে করেছিলেন আহমেদ জামাল ফাহাদকে। সেই বিয়ে তখন রীতিমতো শিরোনাম হয়েছিল। দীর্ঘদিন একসঙ্গে সংসার করার পর তাদের সংসারে আসে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্কও টেকেনি। সোমবার (২০১৯ সালে) তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে পরবর্তীতে পূর্ণিমা নতুন করে জীবনের পথে এগিয়ে যান। তার দ্বিতীয় স্বামী আশফাকুর রহমান রবিন। কয়েক বছর আগে তাদের মধ্যে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব এবং পরে বিয়েতে রূপ নেয় সম্পর্ক। তবু পূর্ণিমার প্রথম বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি তার অনেক ভক্ত।
এইসব গল্পের মধ্যে লুকিয়ে আছে শোবিজের জটিল বাস্তবতা। যেখানে আলো, ক্যামেরা আর গ্ল্যামারের আড়ালেও সম্পর্কের রঙ বদলায়। কখনও মধুর, আবার কখনও তিক্ত।