ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা গণমানুষের এক অভূতপূর্ব আন্দোলন ‘মার্চ ফর গাজা’ আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে। হৃদয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসা, কণ্ঠে প্রতিবাদ আর হাতে পতাকা নিয়ে জনগণ জানিয়ে দিল—ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি এক অনুভব, এক বিবেকের ডাক।
দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ঢাকার শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, দোয়েল চত্বর, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকাগুলো যেন পরিণত হয় এক খণ্ড ফিলিস্তিনে। ছোট-বড়, তরুণ-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জনতার ঢল নেমে আসে একটাই বার্তা নিয়ে—“ফিলিস্তিন তোমার সাথে আছি”।
এই কর্মসূচির আয়োজন করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশটি বিকেল সোয়া ৩টায় বিশ্বখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক।
আয়োজনের শুরুতেই বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ ও মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী জনতাকে সুশৃঙ্খলভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। আজহারীর নেতৃত্বে জনতা একসাথে গর্জে ওঠে স্লোগানে, আকাশে ওড়ে হাজারো ফিলিস্তিনি পতাকা।
অনুষ্ঠানে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান পাঠ করেন ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র। এতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়—ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার, তাদের পণ্য বর্জনের এবং গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের।
ঘোষণাপত্রে ছিল অঙ্গীকার—ফিলিস্তিনের প্রতি একাত্মতা শুধু আবেগ নয়, এটি মানবতার দায়িত্ব।
এই গণজমায়েতে অনন্য এক ঐক্য প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, কবি, শিল্পী, সোশ্যাল মিডিয়া তারকা সবাই ফিলিস্তিনের জন্য এক কাতারে দাঁড়ান। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি, এমনকি মত-পথ ভুলে সাধারণ মানুষও মিলিত হন এই প্রতিবাদে।
বিকেল সোয়া ৪টায় জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত। কণ্ঠে কাঁপন ধরানো সেই দোয়ায় লাখো কণ্ঠ একসাথে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে ফিলিস্তিনিদের জন্য, যারা ইতিহাসের এক ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি।
‘মার্চ ফর গাজা’ ছিল শুধু একটি রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, এটি ছিল বিবেকের জাগরণ, মানবতার নিঃশব্দ আর্তনাদকে কণ্ঠস্বর দেওয়া।
এই গণআন্দোলন প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ দুনিয়ার অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে জানে না। ফিলিস্তিনের জন্য লাখো হৃদয়ের স্পন্দন এক হয়ে বলেছে—“নিপীড়িতের পাশে থাকাই সত্যিকারের মানবতা।”