রাজধানীর পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে, আসামিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৪ মে’র মধ্যে আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ মামলায় আরও দুইজনকে যুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ১৬ জনকে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষ পদে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং যথাযথ যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একটি ১০ কাঠার প্লট নিজের কন্যা সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। যদিও ওই পরিবার ঢাকায় ইতিমধ্যেই রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন, তা গোপন রেখে প্লট বরাদ্দ নেন।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কোনো আবেদন না করেও ‘মায়ের কাছে আবদার’ করে প্লট পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং পরে সেটি নিজের নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেন। এটি সরাসরি সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের শামিল।
মামলার অন্য ১৬ জন আসামি হলেন:১. মো. সাইফুল ইসলাম সরকার – প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২. পুরবী গোলদার – সিনিয়র সহকারী সচিব ৩. কাজী ওয়াছি উদ্দিন – অতিরিক্ত সচিব ৪. মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার – সচিব ৫. মো. আনিছুর রহমান মিঞা – সাবেক পিএ, রাজউক চেয়ারম্যান ৬. মো. খুরশীদ আলম – সাবেক সদস্য, রাজউক ৭. কবির আল আসাদ ৮. তন্ময় দাস ৯. মো. নাসির উদ্দীন ১০. মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী ১১. মো. নুরুল ইসলাম ১২. শেখ শাহিনুল ইসলাম – পরিচালক ১৩. মো. হাফিজুর রহমান – উপপরিচালক
১৪. হাবিবুর রহমান ১৫. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন – সাবেক একান্ত সচিব-১, প্রধানমন্ত্রী ১৬. শরীফ আহমেদ – সাবেক প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, এ সকল ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজশে আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দে সহায়তা করেছেন এবং নিজেরাও লাভবান হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে একটি ১০ কাঠার প্লট নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তদন্তে শেখ হাসিনার পরিবারের জন্য মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ৪০৯ ও ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের দীর্ঘমেয়াদি সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।