জানা নিউজ

‘যুদ্ধ শুরু করেছেন ট্রাম্প, শেষ করব আমরা’—ইরানের কড়া হুঁশিয়ার

মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হামলার জবাবে যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির সামরিক সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করলেও তা শেষ করবে ইরান। এমন হুঁশিয়ারির পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘জুয়াড়ি’ বলে কটাক্ষ করেছে তেহরান।

সোমবার (২৩ জুন) সকালে ইরানের সামরিক সদর দপ্তর খাতাম আল-আনবিয়া-র মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাকারি এক ভিডিও বার্তায় জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে এখন তাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তুর তালিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে। তিনি বলেন, “মি. ট্রাম্প, জুয়াড়ি, আপনি এই যুদ্ধ শুরু করতে পারেন, কিন্তু আমরাই এর অবসান ঘটাবো।”

রোববার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ব্যবহৃত হয় বাঙ্কার-বাস্টার বোমা, যা ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি করেছে বলে দাবি মার্কিন প্রশাসনের। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক পোস্টে এই হামলাকে “বুলসআই” বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ভূগর্ভস্থ স্তরের অনেক নিচে।”

সোমবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রায় ২০টি জেট পশ্চিম ইরান ও তেহরানে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। কেরমানশাহ অঞ্চলে রাডার অবকাঠামো এবং তেহরানে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পারচিনে একটি সামরিক কমপ্লেক্সে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে এবং শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়।

তেহরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিতে তেহরানের অনেক এলাকা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে, বহু মানুষ আশ্রয় নিতে গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছে।

ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন। এই হামলায় প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ঢুকে পড়ে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনো সরাসরি কোনো সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের প্রতিশোধমূলক সক্ষমতা আগের চেয়ে সীমিত হয়ে পড়েছে, কারণ ইসরায়েল ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহকে লেবাননে অনেকটা কোণঠাসা করে ফেলেছে এবং সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ইরানের সম্ভাব্য চাপ তৈরিতে অন্যতম হাতিয়ার হলো হরমুজ প্রণালী। ইরান জানিয়েছে, প্রণালীটি বন্ধ করার অনুমোদনের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সংসদ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রণালীটি বন্ধ হলে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হবে এবং এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে। সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সাময়িকভাবে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়ায়।

এ পরিস্থিতিতে তেহরান কূটনৈতিক সমাধানের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, দুদেশ তাদের অবস্থান সমন্বয়ের চেষ্টা করছে।