ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হলো বিশাল মানবসমাবেশ—‘মার্চ ফর গাজা’। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচি পরিণত হয় লাখো মানুষের প্রতিবাদের মঞ্চে। সব রাজনৈতিক মত-পথ, ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণিপেশা অতিক্রম করে মানুষের ঢল নামে ঐ উদ্যানে।
দুপুর তিনটার পর কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। এরপর আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাঠ করেন ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র। ঘোষণায় মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন অবিলম্বে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। একইসঙ্গে গাজায় চলমান ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
সাধারণ জনগণের পাশাপাশি এ আয়োজনে যুক্ত হয় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। কর্মসূচিতে শিল্পী, কবি, লেখক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও যোগ দিয়ে এই প্রতিবাদকে আরও বর্ণিল করে তোলেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ সকল দোষী ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তারা বলেন, “ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চলছে তা মানবতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ। বিশ্ব মোড়লদের নীরবতা এই হত্যাযজ্ঞে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে।”
সমাবেশ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের জন্য বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আকাশভরা শ্লোগান আর হৃদয়ভরা আকুতি নিয়ে লাখো মানুষ তখন এক কণ্ঠে বলছিল—“গাজা একা নয়, বাংলাদেশ তার পাশে আছে।”
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে মানুষ ছুটে আসে এই সমাবেশে। পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ, তরুণ—সবাই যেন একাত্ম হয়েছেন এক ইস্যুতে: ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি’।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি আজ শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, বরং হয়ে উঠেছে মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে বাঙালির এক বিশাল অবস্থান।