বন্দর ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিপুলসংখ্যক গাড়ি। নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নেয়া না হলে নিলামে বিক্রি করা যাবে। মামলা জটিলতায় বন্দর ইয়ার্ডে শতকোটি টাকার ২৯৭টি গাড়ি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ওসব গাড়ি একদিকে যেমন বন্দর ইয়ার্ডের জায়গা দখল করে বন্দরের আর্থিক ক্ষতি করছে, অন্যদিকে ওসব গাড়ি ব্যবহার না হওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়ির সঙ্গে ডকুমেন্টের মিল না থাকা, যে সিসির গাড়ির আনার কথা, তার চেয়ে বেশি সিসির গাড়ি আনা, বিভিন্ন কারণে কাস্টমস থেকে ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। ইয়ার্ডের সাধারণ লেভেল থেকে একটু নিচু এলাকায় গাড়িগুলো রাখা হয়েছে। খালি চোখে ওসব গাড়ির ওপরের দিকে শুধু গাছগাছালি দেখা যায়। গাড়িগুলো স্পষ্ট দেখা যায় না। তাছাড়া বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডের বাইরে কারশেড এবং ইয়ার্ডের ভেতরে একটি আধুনিক কারশেড করলেও ওই ডাম্পিংয়ে এখন আর গাড়ি রাখা হয় না। সূত্র জানায়, কাস্টমস আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নেয়া না হলে নিলামে বিক্রি করা যাবে। সর্বশেষ বিগত সরকারের ২৪ এমপির গাড়ি বন্দরে আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি না নেয়ায় গাড়িগুলোর তালিকা কাস্টমসের কাছে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই তালিকা অনুযায়ী নিলাম ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে কাস্টমস। আমদানিকারকের বিপরীতে শেষবারের মতো শুল্ক দিয়ে ওসব গাড়ি ডেলিভারি নেয়ার জন্য চিঠিও ইস্যু করা হয়েছে। আর যদি ডেলিভারি নেয়া না হয় তাহলে এগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। এমপিদের গাড়ি যদি নির্ধারিত সময়ের পর নিলামে ওঠানো যেতে পারে, তাহলে বছরের পর বছর বন্দরের ভেতরে থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়িগুলো কেন নিলামে ওঠানো হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সূত্র আরো জানায়, কাস্টমসের নিলাম নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর পড়ে থেকে গাড়িগুলো নষ্ট হচ্ছে। কাস্টমস চাইলে ওসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করতে পারতো। কিন্তু তারা তা না করে একাধারে বন্দরের যেমন ক্ষতি করেছে, তেমনিভাবে দেশেরও আর্থিক ক্ষতি করেছে। ওসব গাড়ি ডলারে কেনা হয়েছে। আবার গাড়িগুলো ব্যবহার না হওয়ায় সেগুলোর সুবিধা পাওয়া গেল না। এদিকে কাস্টমস থেকে বিড করে পণ্য সংগ্রহকারীদের মতে, প্রতিটি মামলারই একটি নির্ধারিত সময় থাকে। একটি মামলা আজীবন চলতে পারে না। গাড়ির মামলাগুলো ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা। আর যদি আদালত রায় নাও দেয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে যায়। ওই আলোকে কাস্টমস তা নিলামে ওঠাতে পারে। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা আইনের দোহাই দিয়ে গাড়িগুলো রেখে দিয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে আর এগুলো ব্যবহারও করা যায় না। সম্প্রতি এমন ৭৫টি গাড়ি নিলামে বিক্রি না করে টুকরো টুকরো করে রাখা হয়েছে। এগুলো টুকরো না করে নিলামে দিলে গাড়ির পার্টসগুলো অন্ততপক্ষে কাজে লাগানো যেতো। আমদানি করা গাড়ির সঙ্গে ডকুমেন্টের মিল না থাকা এবং যে সিসির গাড়ির আনার কথা ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে এর চেয়ে বেশি সিসির গাড়ি আনা। এ ছাড়া পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ি (উৎপাদনের তারিখ থেকে বন্দরে আসার তারিখ পর্যন্ত) আনা হলে, কারনেট সুবিধায় (পর্যটক সুবিধায়) আসা গাড়িসহ বিভিন্ন কারণে কাস্টমস থেকে ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া গাড়িগুলোই চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে বন্দর ইয়ার্ডে পড়ে থাকা গাড়ির বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, বন্দরের ভেতরে ডাম্পিং অবস্থায় থাকা ২৯৭টি গাড়ির মধ্যে ২০০২ সালের গাড়িও রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ওসব গাড়িকে সরিয়ে নেয়ার জন্য কাস্টমসকে দফায় দফায় অনুরোধ করলেও নেয়নি। ওই গাড়িগুলো বন্দরের মূল্যবান জায়গা দখল করে রেখেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম) সাইদুল ইসলাম জানান, ওসব গাড়ির বিপরীতে মামলা রয়েছে। আর মামলা থাকলে কাস্টমস নিলামে তুলতে পারে না। তবে মামলা ছাড়া যেসব গাড়ি রয়েছে সেগুলো নিলাম প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে যদি মামলা থাকে তাহলে সম্ভব হবে না।