জানা নিউজ

ভারতকে থামান: জাতিসংঘকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

সীমান্ত দিয়ে ভারত ছাড়ছেন শত শত পাকিস্তানি

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ‘ভারতকে থামানোর’অনুরোধ জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাতেও বলেন তিনি।

ইসলামাবাদ থেকে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। আলোচনায় দুই নেতা দক্ষিণ এশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শাহবাজ বলেন, ‘ভারতের কোনো দুর্ভাগ্যজনক আচরণের জবাবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিন্ধু নদীর পানিকে অস্ত্র বানানোর যে প্রয়াস ভারত নিচ্ছে, তা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

গত ২২ এপ্রিল  পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। তবে এ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে শাহবাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের তদন্তের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।

পাকিস্তানের প্রধানন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করি না। বরং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আমরা ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করেছি।’ একইসঙ্গে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়ে দমন করার ভারতীয় কৌশলকে হতাশাজনক ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

শাহবাজ বলেন, ‘কাশ্মীরে ভারতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দমনুপীড়নই আসল সন্ত্রাস। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে তারা পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করছে।’

তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, সিন্ধু অববাহিকার পানিকে পাকিস্তানের ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনীশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারত যদি পানি নিয়ে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তবে তা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে গণ্য হবে।

আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতুপাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান গতিপথে গভীর উদ্বেগ জানান এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি দুঃখজনক পরিণতির দিকে যেতে পারে।’ উত্তেজনা হ্রাসে গুতেরেস নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান।

এদিকে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, মহাসচিব ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি উভয় পক্ষকে আইনি পথে ন্যায়ের পথ অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করতে বলেছেন।

এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরীফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান যেহেতু ‌‘পারমাণবিক’ শক্তিধর দেশ তাই এত সহজে দেশটিতে কেউ আক্রমণ করতে পারবে না । সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দ্য ডনের  প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরীফ বলেন, পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ আল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দেশ রক্ষার শক্তি দিয়েছেন। পাকিস্তানের যেকোনো শত্রু আক্রমণ করার আগে ১০বার ভাববে। সবাই জানে যে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, আমাদের অবশ্যই ইস্পাতের প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।