১৬ বছর আগে সংঘটিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার অন্যতম ছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড। সেই ভয়াল ঘটনার রহস্যভেদে গঠিত তদন্ত কমিশন এখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আগামী জুন মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই তথ্য জানায় কমিশনের সদস্যরা। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নৃশংসভাবে নিজেদের অফিসারদেরই তারা হত্যা করেছিল। ঘটনাটি অত্যন্ত মসৃণভাবে সংঘটিত হয়েছিল, যা পূর্ব পরিকল্পনার স্পষ্ট প্রমাণ। আমরা সবাই উত্তর খুঁজছি। কমিশনকে এই রহস্যের সমাধানে সফল হতেই হবে। পুরো জাতি এখন এই তদন্ত কমিশনের দিকেই তাকিয়ে আছে।”
তিনি আরও আশ্বাস দেন, তদন্ত কার্যক্রমে কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কারণ অনেক অভিযুক্ত এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি।”
তিনি জানান, “কারাগারে থাকা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশে অবস্থানকারী ২৩ জনের মধ্যে ৮ জনের সাক্ষাৎকার ইতোমধ্যে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা মূলত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের প্যাটার্ন অনুসন্ধান করছি। প্রথমে ডিজিকে হত্যা করা হয়, তারপর একে একে অন্যদের— এটি একটি নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল।”
তদন্ত কমিশনের প্রধান আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড যেন ইতিহাসের সেই ভয়াল পলাশীর ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি। আমরা এই ঘটনার শেকড় খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর।”
কমিশনের অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, “এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পরও একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকেও সরানো হয়নি, কাউকে দায়ীও করা হয়নি। এটি গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সম্মিলিত ব্যর্থতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. এম আকবর আলী, মো. শরীফুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ খান চন্দন, ও এ টি কে এম ইকবাল।