২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর পর, সেই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দণ্ডিত ২৭ জন সাবেক বিডিআর সদস্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে তারা কারাগারের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসেন। স্বজনদের আবেগঘন উপস্থিতিতে কারাফটক পরিণত হয় মিলনের উৎসবে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের (প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) বিচারক ইব্রাহীম মিয়া গত সোমবার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ৪০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১১ জন, পার্ট-১ থেকে ৫ জন এবং পার্ট-২ থেকে ১০ জন মুক্তি পান। এছাড়া গত বুধবার আরও একজন মুক্তি পেয়েছিলেন, সব মিলিয়ে এই সপ্তাহে কাশিমপুর ইউনিট থেকে ২৮ জন মুক্তি পেলেন।
জেল সুপার মোহাম্মদ আল মামুন জানান, জামিনের কাগজপত্র পৌঁছানোর পর যথাযথ যাচাই-বাছাই করে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, কারাগার কর্তৃপক্ষ সব প্রক্রিয়া সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।
এর আগে একই মামলার আওতায় ১৭৮ জন জামিন পেয়েছিলেন, যারা হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ছিলেন। নতুন এই জামিনসহ এখন পর্যন্ত মোট ২১৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দফতরে ভয়াবহ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। বিদ্রোহীরা তাদের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে। প্রাণ হারান তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং আরও কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তি। ওই ঘটনায় মোট ৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
ঘটনার পরদিন ও ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লালবাগ থানায় দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা এবং আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়। খালাস পান ২৭৮ জন। বর্তমানে মামলার আপিল শুনানি চলমান রয়েছে।
দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পাওয়া এসব সাবেক বিডিআর সদস্যদের অনেকেই মধ্যবয়সী, কেউ কেউ প্রবীণ। অনেক পরিবার অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কারাফটকে স্বজনদের চোখে জল, মুখে হাসি—এই মুক্তি তাদের কাছে শুধুই একটি আইনি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি নয়, এটি একটি নতুন জীবনের সূচনা।