জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার পরিধিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে হিমালয়-এ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সারা দেশে এ সময় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ব্যস্ততা অনেকদিন চলমান থাকবে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, বৈশাখ মাসে বজ্রপাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বজ্রপাত মৌসুমে, বিশেষ করে ২৮ এপ্রিল একদিনেই বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন, যাদের মধ্যে ১৯ জনই কৃষক ছিলেন। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং এ দুর্যোগ থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে লাখ লাখ তালগাছ লাগানোর প্রকল্প থেকে সুফল মিলেনি। তালগাছ লাগানো হয়েছিল মূলত সড়কের পাশে। অথচ এক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায় মাঠে। একটি তালগাছ বড় হওয়ার জন্য বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ দৃষ্টান্ত বিবেচনায় নিয়ে আগামী দিনে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার মতো এলাকায় বজ্র নিরোধক দণ্ড বসিয়ে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। এজন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেওয়া যায়। বজ্র নিরোধক দণ্ডের সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রকল্পে স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বজ্রপাতের ঝুঁকি প্রশমনে একগুচ্ছ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে বজ্রপাতের সময় জানালা ও দরজা বন্ধ রাখতে হবে, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশগুলোর প্লাগ খুলে রাখতে হবে, জলাশয়ে থাকলে দ্রুত উঠে আসতে হবে এবং অবশ্যই বিদ্যুৎ পরিবাহক বস্তুর ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। লক্ষ করা গেছে, প্রাক-বর্ষাকাল এবং বর্ষাকালজুড়ে সারা দেশে বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি বাড়ে। কাজেই এ সময় কীভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা মিলবে, তা মানুষকে জানাতে হবে। মানুষ মাঠেঘাটে হরহামেশাই বজ্রপাতে প্রাণ হারান। কাজেই এ থেকে সুরক্ষায় সময়োপযোগীয় প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে এবং তা সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বজ্রপাতে আহত মানুষের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্যও নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ।