বাংলাদেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় এক নতুন মোড় এনে তিনটি ভিন্ন মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোটগুলোতে রয়েছে দেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্যের চিত্র, তবে অনুপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি—যা আগে প্রতিটি কাগুজে নোটেই ছিল। নতুন নোটগুলোর মধ্যে রয়েছে ১,০০০, ৫০ ও ২০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নতুন এই নোটগুলো প্রথমবারের মতো বাজারে আসবে শনিবার (১ জুন) থেকে। প্রাথমিকভাবে এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে ছাড়া হবে এবং পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য শাখা থেকেও ইস্যু করা হবে। এই তিনটি নতুন নোটের পাশাপাশি আগের নোটগুলোও যথারীতি চালু থাকবে।
নতুন নোটগুলোকে সাজানো হয়েছে ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ থিমে।
১,০০০ টাকার নতুন নোটের সম্মুখভাগে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং পেছনে জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি। ৫০ টাকার নোটে আহসান মঞ্জিল এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্ম ‘সংগ্রাম’ স্থান পেয়েছে। ২০ টাকার নোটে রাখা হয়েছে দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির ও নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের চিত্র।
নোটগুলোতে নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের স্বাক্ষর রয়েছে। একই সঙ্গে শতভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এসব নোটে যুক্ত হয়েছে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, যেমন জলছাপ, রং পরিবর্তনশীল কালি, নিরাপত্তা সুতা ও UV শনাক্তযোগ্য উপাদান।
১,০০০ টাকার নোটে ১৩ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫ মিমি চওড়া নিরাপত্তা সুতা, লুকানো ছাপা, ম্যাজেন্টা-থেকে-সবুজ রং পরিবর্তনশীল কালি, এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ছয়টি উঁচু বৃত্ত।
৫০ টাকার নোটে ৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, আর ২০ টাকার নোটে ৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে। সব নোটেই আছে See-through image ও Microprint, যা আলোর বিপরীতে বা ম্যাগনিফাইং গ্লাসে দেখা যায়।
সংগ্রাহকদের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে সংগ্রহযোগ্য নমুনা নোটও ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো বিনিময়যোগ্য নয় এবং শুধুমাত্র রাজধানীর মিরপুরে টাকা জাদুঘর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
এর আগে বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ঈদুল ফিতরের আগেই বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নকশার নোট বাজারে আসতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ঈদের আগে সেসব নোট ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঈদুল আজহার আগে ২৪ মে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের জানান, নতুন নোটে কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না—এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের নোট।
তবে কেন রমজানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেওয়া নোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হলো, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা তখন দেওয়া হয়নি।