বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। স্যাটেলাইটভিত্তিক বৈশ্বিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। সোমবার, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই অনুমোদন দেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
প্রেস উইংয়ের ভাষ্যমতে, স্টারলিংক শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এটি দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোয় এক যুগান্তকারী সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, স্টারলিংক মে মাসের মাঝামাঝিতে পরীক্ষামূলকভাবে সেবা চালু করতে পারে। প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের জন্য একটি বিশেষ অনুমতি দেওয়া হবে, যেখানে স্থানীয় গেটওয়ের প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি স্টারলিংক সেবামূল্য বা ট্যারিফ প্ল্যান নির্ধারণের কাজ করছে এবং বিটিআরসিতে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) এ বিষয়ে আবেদন জমা দেবে।
বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও জানান, গত বছরের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিক ইন্টারনেট বন্ধের প্রতিবাদে দেশের জনগণের মধ্যে স্টারলিংকের প্রতি প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। এই গণদাবি এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব ভাবমূর্তি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ককে ফোন করে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর বিষয়ে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল, পার্বত্য এলাকা ও উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে এখনও মানসম্মত ইন্টারনেট পৌঁছেনি। স্টারলিংক এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংকের মাধ্যমে দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ সম্ভব হবে।
স্টারলিংকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—লোডশেডিংয়ের সময়েও ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হবে না। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়, বিশেষ করে মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারির ব্যাকআপ শেষ হয়ে গেলে মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ হয়ে যায়। স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সংযোগ দেওয়ায় এই সমস্যা হবে না, যা দেশের নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চলতি বছরের ২৫ মার্চ স্টারলিংকসহ স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের জন্য লাইসেন্সিং গাইডলাইন জারি করে। এই গাইডলাইনের আওতায় স্টারলিংক প্রয়োজনীয় ফি ও কাগজপত্রসহ বিটিআরসিতে আবেদন করে। ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিটিআরসির কমিশন সভায় নীতিগতভাবে স্টারলিংকের লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এখন শুধু আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম সম্পন্নের অপেক্ষা। সব ঠিক থাকলে আগামী মাসেই বাংলাদেশে উচ্চগতির, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিয়ে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হবে—এমন প্রত্যাশা দেশের প্রযুক্তিপ্রেমী নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।