জানা নিউজ

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে- যেখানে শত শত নাগরিক শহিদ হন, অনেকে নিখোঁজ হন, আর অসংখ্য পরিবার হারায় তাদের প্রিয়জনকে। সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়ের কয়েক মাস পর আমরা একটি নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি- বিচার চাওয়ার পথ এখন কবরের মাটি খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। একদিকে আছে হত্যার বিচার পাওয়ার তীব্র আকুতি, অন্যদিকে রয়েছে মৃতের প্রতি সম্মান ও পরিবারের আবেগের প্রশ্ন। যাত্রাবাড়ীর শহিদ মনোয়ার হোসেন কিংবা বনশ্রীর শরীফ মিঠু- কেউই আজ আর জীবিত নেই। তাঁরা কেউ ফিরবেন না, কিন্তু পরিবার চায় অন্তত তাদের হত্যার বিচার হোক। এর জন্য দরকার ময়নাতদন্ত- যা সেই সময় করা হয়নি। কেন হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তর অনেকাংশেই রাজনৈতিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তখনকার পরিস্থিতি ময়নাতদন্তের জন্য অনুকূল ছিল না। পরিবারগুলোও আতঙ্কে ছিল, মামলা করার সাহস পায়নি। কিন্তু এখন, যখন মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে- তখন আবার এক নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। এই কাজটি একদিকে আইনি কর্তব্য, অন্যদিকে গভীরভাবে আবেগতাড়িত। শহিদদের পরিবার চায় না তাদের প্রিয়জনের লাশ আবার উঠুক, কাটাছেঁড়া হোক। আবার একই পরিবার বলছে- ‘বিচার না পেলে কি সেই মৃত্যুকে মূল্য দেওয়া হয়?’ ময়নাতদন্ত একটি অপরিহার্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যার ওপর নির্ভর করে তদন্ত ও বিচার। এটিকে এড়িয়ে গেলে মামলা দুর্বল হয়, অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে। তবু, ময়নাতদন্তের এই দেরিতে প্রয়োগ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে নগ্ন করে দেয়। এত বড় ঘটনার পরও রাষ্ট্র তখন এমনভাবে নিস্ক্রিয় ছিল যে, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার মতো প্রাথমিক কাজটিও করা হয়নি। এই দেরিতে ন্যায়বিচার চাওয়ার এই পথজুড়ে পড়ে আছে ক্ষতবিক্ষত মানবিকতা। কবর খুঁড়ে আবারও পিতা, ভাই, স্বামীদের মৃতদেহ দেখার মানসিক ধাক্কা যেকোনো পরিবারের জন্য ভয়াবহ। কিন্তু সেটাই যদি ন্যায়ের একমাত্র পথ হয়- তবে রাষ্ট্রকে আরও সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল ও যত্নবান হতে হবে। শুধু আইনি প্রক্রিয়া যথাযথ নয়, প্রয়োজন পরিবারগুলোর মানসিক সহায়তা, নিরাপত্তা এবং সর্বোপরি, সঠিক সময়মতো বিচার নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র যদি সময়মতো নিজের কর্তব্য পালন করত, তবে শহীদদের লাশ আবার উত্তোলনের প্রয়োজন হতো না। এই পরিণতি শুধুই তদন্ত কর্মকর্তার দায় নয়, এটি গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ।