কারিগরি শিক্ষার নানামুখী সংকট এবং দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এবার দিলেন ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। সময়সীমার মধ্যে কোনো সদুত্তর না পেলে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এই ঘোষণা এসেছে রাজধানীর ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন এক বিশাল মহাসমাবেশ থেকে, যেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন মূলত ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম দাবিগুলো হলো:
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে অবৈধ প্রমোশন বাতিল, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সসীমা নির্ধারণ, মানসম্পন্ন ইংরেজিমাধ্যম কারিকুলাম চালু করা।
৩. ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সরকারি পদ সংরক্ষণ ও নিয়োগে বৈষম্য নিরসন।
৪. কারিগরি পদে অ-কারিগরি জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট পদে শিক্ষিত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ।
৫. স্বতন্ত্র কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং একটি সংস্কার কমিশন গঠন।
৬. উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং চলমান প্রকল্পে পলিটেকনিক পাস শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এই আন্দোলন নতুন নয়। গত ৮ মাস ধরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন। ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি, কাফনের কাপড় পরে মিছিল, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ—সবই ছিল দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে আলোচনাতেও শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা মনে করছেন, সরকার সময়ক্ষেপণ করছে এবং প্রকৃত সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়।
সমাবেশে উপস্থিত পলিটেকনিক ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন—
“দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেও আমরা সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি। এখন সময় এসেছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে আমরা লংমার্চ করব। আর তখন সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না।”
তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—রাস্তায় থাকতে তারা চায় না, কিন্তু সরকারই তাদের বাধ্য করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের লক্ষ্যে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা যানজট বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চান না। তবে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যাপ্তি বাড়বে—এ নিয়ে সংশয় নেই। তারা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সংগঠিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এবং ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে ইস্যুটি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।