জানা নিউজ

নতুন সংবিধান নয়, এখন প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক সংস্কার: আসিফ নজরুল

নতুন সংবিধান প্রণয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা বাস্তবায়নে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তাঁর মতে, যতক্ষণ না একটি পূর্ণাঙ্গ নতুন সংবিধান গৃহীত হচ্ছে, ততদিন ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল কাঠামো বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংস্কার চালিয়ে যাওয়া উচিত।

রোববার (১১ মে) রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাগরিক উদ্যোগ, নাগরিক কোয়ালিশন ও সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের আয়োজিত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, “নতুন সংবিধান তৈরি হতে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ৮ থেকে ৯ বছর সময় লাগতে পারে। আমাদের দেশেও এই প্রক্রিয়া ২ থেকে ৩ বছর বা তারও বেশি সময় নিতে পারে। এই সময়কালে আমরা কি শুধু অপেক্ষা করবো, না কি প্রয়োজন অনুযায়ী ৭২-এর সংবিধান ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালিয়ে যাবো?”

তিনি মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য জাতীয় সংসদকেই সংবিধান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং জনগণের দাবি অনুযায়ী সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যেমন—প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ, ও সংবিধানের আর্টিকেল ১৭—নিয়ে কাজ করতে হবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “সংবিধান সব প্রশ্নের উত্তর দেয় না। অনেক সময় ছোট ছোট আইন দিয়েই বড় পরিবর্তন আনা যায়। সুশাসনের জন্য কেবল একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান নয়, বরং কার্যকর আইন ও নৈতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদকে সংবিধান খসড়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে দ্বৈত কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করার মতো প্রস্তাব রয়েছে। তার মতে, “জুলাই সনদের মূলনীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয়। এর অনেকগুলো বিষয় ভবিষ্যতের সংবিধানে রাখা যেতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসংক্রান্ত বিতর্ক প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “দুই মেয়াদের সীমা নির্ধারণ করা যথেষ্ট নয়। বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করা। ভারতে, যুক্তরাজ্যে বা অনেক দেশেই এমন মেয়াদসীমা নেই, কিন্তু সেখানে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য বজায় থাকে কারণ ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ রয়েছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান সংবিধানে প্রধান বিচারপতির ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার দিক দিয়ে তিনি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। তাই রাষ্ট্রপতি যেন স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন, সেটিও সংবিধান সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

শেষ পর্যন্ত, আসিফ নজরুলের বক্তব্যে উঠে আসে একটি স্পষ্ট বার্তা—নতুন সংবিধানের জন্য অপেক্ষা না করে জনগণের স্বার্থে বিদ্যমান কাঠামোর ভিত্তিতে কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত সংস্কার এখন সময়ের দাবি।