জানা নিউজ

তুরস্কের তৈরি প্রথম হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন

তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, আদর্শিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীর হওয়ার প্রেক্ষাপটে তুরস্ক মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা শিল্প মেলা (আইডিইএফ) ২০২৫-এ তাদের প্রথম হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে। ‘তাইফুন ব্লক-৪’ নামের এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির প্রতিরক্ষা সংস্থা রকেটসান নির্মিত এবং এটি তাদের নিজস্বভাবে তৈরি সর্বাধিক দূরপাল্লার তাইফুন ক্ষেপণাস্ত্রের হাইপারসনিক সংস্করণ। তুর্কি টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাইফুন ব্লক-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটির দৈর্ঘ্য ৬.৫ মিটার, ওজন দুই হাজার ৩০০ কেজি এবং এর পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার। রকেটসানের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘তাইফুন ব্লক-৪ দীর্ঘ পাল্লা অর্জন করে তুর্কি প্রতিরক্ষাশিল্পে আরেকটি রেকর্ড স্থাপন করেছে। সাত টনের বেশি ওজনের এই সংস্করণে রয়েছে বহুমুখী ওয়ারহেড, যা দূরবর্তী অবস্থান থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, সামরিক হ্যাঙ্গার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে পারবে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
‘হাইপারসনিক’ শব্দটি সাধারণত হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল ও হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এসব অস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে চলতে পারে এবং মাঝপথে দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে, যা এগুলোকে শনাক্ত ও প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রায় সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই লক্ষ্যভেদে নামার সময় হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছয়।
তুরস্ক-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক
এদিকে ভারতের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়লে ইসলামাবাদ ও আংকারার মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে। যদিও তুরস্ক ও পাকিস্তান—দুই দেশই অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী পরে জানায়, তুরস্কের তৈরি বাইরাকতার টিবি-২ ড্রোন পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। চলতি মাসে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান (ক্ষমতা উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেন, ‘তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছে। তারা বাইরাকতার দিয়েছে। যুদ্ধ চলাকালীন আরো অনেক ড্রোন আসতে দেখা গেছে।’ মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার সময় ইসলামাবাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তুরস্ক। নিজেদের প্রতিরক্ষাশিল্প প্রসারিত করে তুরস্ক এখন পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা অংশীদার হয়ে উঠেছে, ড্রোন ও নৌবাহিনীর অস্ত্র সরবরাহ করছে ইসলামাবাদকে। এই আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থানগত পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত মিলেছে, যখন চলতি মাসে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ইসলামাবাদ সফর করেন। ওই সময় তিনি প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দেন।