জানা নিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বিচারহীনতার বাস্তবতা

: জাহিদুল ইসলাম মামুন

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষা গবেষণার কেন্দ্রস্থল নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন সামাজিক পরিবর্তনেরও সূতিকাগার। তবে এই বিদ্যাপীঠে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা হত্যাকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংঘটিত অন্তত ৭৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধ দিকগুলোর একটি নির্মম দৃষ্টান্ত।

উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ডসমূহ

১. ১৯৭৪ সালের এপ্রিল – মুহসীন হল হত্যাকাণ্ড
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সংঘটিত এই ঘটনায় সাতজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এটি ছিল রাজনৈতিক সংঘর্ষের জের।

 ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি – রাউফুন বাসুনিয়া হত্যাকাণ্ড
ছাত্রলীগ নেতা রাউফুন বাসুনিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তালতা সৃষ্টি করে।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর – ডা. শামসুল আলম খান মিলন হত্যাকাণ্ড
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় টিএসসি মোড়ে সামরিক বাহিনীর গুলিতে তিনি নিহত হন। তার মৃত্যু স্বৈরাচার পতনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি – আবু বকর হত্যাকাণ্ড
স্যার এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আবু বকর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন। মামলাটি আদালতে গড়ালেও অভিযুক্তরা খালাস পান।

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর – গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল হোসেন
চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠে। তদন্তে জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণসমূহ

  • ছাত্র রাজনীতির সহিংস ধারা

  • দণ্ডপ্রাপ্তদের রাজনৈতিক মদদ

  • ক্যাম্পাসে অপরাধের বিচারহীনতা

  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা

  • বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকা

বিচারহীনতার চিত্র

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে দীর্ঘসূত্রতা, তদন্তে গাফিলতি, এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিচার হয়নি কিংবা দোষীরা খালাস পেয়ে গেছেন। এর ফলে ক্যাম্পাসে সহিংসতার সংস্কৃতি আরও বেগবান হয়েছে।

সুপারিশসমূহ

  • ক্যাম্পাসে রাজনীতির সহিংস রূপ দমনে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন

  • নিরপেক্ষ তদন্ত দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ

  • বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা

  • ছাত্র সংগঠনগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা

  • নিরাপত্তা জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নয়ন

উপসংহার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড বিচারহীনতা কেবল শিক্ষার পরিবেশকেই কলুষিত করে না, বরং দেশের গণতন্ত্র ন্যায়বিচারের ভিত্তিকেও দুর্বল করে। এসব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করাই হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ।