প্রায় দেড় দশক পর সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় সক্রিয় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান। আমনা বালুচের সফর ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
আগামী ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিতব্য দ্বিপক্ষীয় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন আমনা বালুচ, আর বাংলাদেশের পক্ষে থাকবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা। পাশাপাশি সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮-এর মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা হবে।
বৈঠক শেষে আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় আলোচনার টেবিলে আসবে। কোনো কিছুই উপেক্ষিত থাকবে না। অগ্রগতির মূল্যায়ন ও ভবিষ্যতের করণীয় বিষয়ে স্পষ্ট আলোচনা হবে।”
সর্বশেষ সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে ইসলামাবাদে। এরও আগে, অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ সভা হয়েছিল ২০০৫ সালে। দীর্ঘ সময় পর আলোচনার এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে উভয় দেশ। তবে বাংলাদেশ মনে করে, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে ঐতিহাসিক ও অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান জরুরি।
ঢাকার দিক থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা, যুদ্ধক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা, এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আন্তর্জাতিক সাহায্যের পাওনা পরিশোধ—এসব বিষয় সমাধান না হলে সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,
“পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। এসব অমীমাংসিত ইস্যু থাকতেই আলোচনা হয়, এবং থাকবে। সমাধান ছাড়া এগিয়ে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয়। সম্পর্কের টেকসই অগ্রগতির জন্য অতীতের দায় স্বীকার করাই সঠিক পথ।”
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে পাকিস্তান তাদের পক্ষ থেকে একটি যৌথ কমিশন পুনর্বহালের প্রস্তাব দিতে পারে, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশ চাইছে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও শিক্ষা সহযোগিতার বিশেষায়িত কর্মসূচি চালু করতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ হলেও অতীতের অমীমাংসিত বিষয়গুলো মোকাবিলা না করলে আস্থার ভিত্তি তৈরি হবে না।
সফরের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ঢাকায় তাদের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সম্ভাব্য সফর নিয়েও আলোচনা করবেন। চলতি মাসের শেষ দিকে ইসহাক দার ঢাকায় আসতে পারেন বলে জানায় একটি কূটনৈতিক সূত্র।