তাহলে কী এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা বয়কটের যে সিদ্ধান্ত ভারত জানিয়েছে তা মেনে নিয়েছে সংস্থাটি? ঢাকায় এসিসির এজিএম হলে ভারত বয়কট করবে তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। এসিসি নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা ঢাকাতেই কাল বৃহস্পতিবার করবে এসিসি সভা। আজ অনুষ্ঠিত হয় প্রধান নির্বাহীদের বৈঠক। সেই বৈঠকে নেই ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইয়ের কোনো প্রতিনিধি। এবং আয়োজক বাংলাদেশের কাছে যে অতিথি তালিকা পাঠিয়েছে এসিসি তাতে নেই ভারতের নামও। তাতে স্পষ্ট হচ্ছে, ভারতকে উপেক্ষা করেই ঢাকায় আজ হতে যাচ্ছে এসিসির সভা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এই সভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। এসিসি সভাপতি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মহসিন নাকভী বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে পা রেখেছেন। তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম একাধিকবার জানিয়েছেন, তারা কেবল এসিসি সভার হোস্ট এবং ‘লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার কাজ করছে। সভার প্রাক্কালে আরো একবার এই কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি, “এসিসির সভার ব্যাপারটি পরিষ্কার করি। এশিয়ার ৫টি পূর্ণ সদস্য ও ২৫টি সহযোগী সদস্য নিয়ে তারা কাজ করে। এসিসির কাছ থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছিল যে আমরা এই এজিএম আয়োজন করতে চাই কি না। আমরা রাজি হয়েছি। এটি এসিসিরই প্রোগ্রাম। আমরা তাদেরকে লজিস্টিকাল সাপোর্ট করছি। এটাই একমাত্র ব্যাপার, যা আমরা করছি।” কে আসছে, কে আসছে না পুরো বিষয়টি তদারকি করছে এসিসির কর্মকর্তারা। বিসিবি যা করছে তা-ও পরিস্কার করেছেন সভাপতি, “আমরা এসিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা জানাচ্ছে কে আসছেন, কে আসছেন না, তাদের কখন এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে হবে, হোটেল বুকিং, অনুষ্ঠানস্থলে আমাদের কী কী সাপোর্ট দিতে হবে, এসব। এর বাইরে আমাদের কোনো কাজ নেই।” ভারত তাদের কোনো প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই সভায় কোনো প্রতিনিধি পাঠানো নিশ্চিত করেনি। তাতে এসিসির পূর্ণ সদস্য পাঁচ দেশগুলোর বৈঠকে যদি তিনটিই অনুপস্থিত থাকে তাহলে সভার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পাশাপাশি সামনে এশিয়া কাপ নিয়েও কী সিদ্ধান্ত আসবে সেটাও দেখার। ভারত এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই আয়োজন করতে উৎগ্রীব। তবে এসিসি সভা বয়কটের প্রতিক্রিয়াতে ভারত নতুন করে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও দেখার। এশিয়ার তিন দেশ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং পাকিস্তান-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠায় ক্রিকেট আবহ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে অনেকটাই। তাতে বাংলাদেশকে নিকট ভবিষ্যতে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে কিনা তা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে। যদিও আমিনুল ইসলামের বিশ্বাস এসব কিছুই হবে না, “আমার মনে হয় না (সমস্যা হবে)। ক্রিকেট সবার ওপরে। এই ধরনের সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়। আমি আবারও বলছি, আমরা কেবলই আয়োজক। আগে কখনও আমরা এজিএম হোস্ট করিনি। বোর্ডের সবাই মিলে, দেশের সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করব যেন ভালো একটা এজিএম হয়।” পাকিস্তানের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করার কথাও জানালেন আমিনুল, “পাকিস্তান বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আসছেন, তিনি এখন এসিসির প্রধান। এটা তার প্রোগ্রাম। এর ফাঁকে ফাঁকে আমরা আলোচনা করব যদি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাড়ানো যায়, ক্রিকেট নিয়ে আরও যদি আলোচনা বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করব।” এদিকে বিসিবির ভেতরের খবর, বোর্ডের কিছু পরিচালক এসিসির এই সভা আয়োজন করতে আমিনুলকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। ভারতকে অসন্তুষ্ট করতে চাইছিলেন না তারা। কিন্তু সভাপতি আমিনুল জোর দিয়ে তাদেরকে জানান, তিনি আগেই এসিসি চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছেন ঢাকাতেই সভা হবে। সেখান থেকে সরে আসতে পারবেন না।’’ এদিকে এসিসি প্রধান ঢাকায় পা রেখে এসিসি সভা স্থগিত করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডকে ছাড়া যেকোনো আয়োজন করা সিদ্ধান্তই কঠিন। এসিসি এবং বিসিবি সেই কাজটাই করতে যাচ্ছে। সামনে এশিয়ান ক্রিকেটে সেই প্রভাব কতটুকু পড়ে দেখার।