আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজার খান ইউনিসের আল-নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল বারহুমসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় এই হামলা চালানো হয়। হামলায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামাস ও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইসমাইল বারহুম, যিনি সংগঠনটির অর্থ-বিষয়ক প্রধান ছিলেন। চার দিন আগে এক বিমান হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, এটি সুনির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যে পরিচালিত আক্রমণ ছিল। তবে হামাস এই হামলাকে ‘গণহত্যামূলক হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘বিস্তৃত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের পর’ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয় এবং এতে ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহার করা হয় যাতে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা যায়। তবে হামাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার অংশ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও সাধারণ রোগী আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত সার্জারি বিভাগ খালি করে দেওয়া হয়েছে এবং হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভবনের তিন তলায় আগুন জ্বলছে এবং লোকজন আতঙ্কিতভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে।
একই দিনে, খান ইউনিসে ইসরায়েলের পৃথক আরেকটি হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হয়েছেন। তিনি হামাসের ১৯ সদস্যবিশিষ্ট রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য ছিলেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, শনিবার গভীর রাতে পরিচালিত হামলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রায় দুই মাস যুদ্ধবিরতি চলার পর, গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই থেকে চালানো হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতালে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলকে হাসপাতাল ও মানবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল যুক্তি দিয়েছে যে হামাস তাদের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে হাসপাতালগুলো ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাত কবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নতুন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও, উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে। এর ফলে সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গাজা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সমাধানের কোনো কার্যকর পথ এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।