জানা নিউজ

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যই সাফল্যের চাবিকাঠি: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান সংলাপের সাফল্য নির্ভর করছে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যের ওপর—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আয়োজিত এক সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজে মতের ভিন্নতা থাকলেও আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন—রাষ্ট্র পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে শহীদদের আত্মত্যাগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পথ খুঁজতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো, সকলে একত্র হয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করার সুযোগ পেয়েছি—এটি যেন হাতছাড়া না হয়।”

ড. রীয়াজ উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোনো একক দলের উদ্যোগ নয় বরং এটি একটি সম্মিলিত প্রয়াস। তিনি বলেন, “আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি, যা শুধু সরকারের বিষয় নয়, বরং এটি গোটা জাতির প্রত্যাশা। জনগণ চায়, যারা অতীতে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ যেন অর্থবহ হয়।”

বৈঠকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৬ বছর ধরে মানুষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সংস্কার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মতাদর্শের কারণে কোনো নাগরিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ শুধু কাগজে নয়, বাস্তবেও কার্যকর হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা দলগুলো আগেই সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল। ফলে ন্যূনতম ঐক্যের ভিত্তিতে একটি বাস্তবমুখী পথনকশা তৈরি করা এখন তুলনামূলক সহজ হয়েছে। জুনের শুরুতেই মৌলিক প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে উঠবে বলে আমরা আশা করি।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং সফর রাজ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আলোচনায় উঠে আসে, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র গঠনের লক্ষ্যে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসাই এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। জাতিকে একটি দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টায় ভিন্নমত সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো যেন এক অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একত্র হয়—এমনই প্রত্যাশা রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।