জানা নিউজ

কানাডা দাবানলের পর পুনর্বনায়নের জন্য ড্রোন ব্যবহার করছে

একটি বড় আকাশচালিত ড্রোন দাবানলে ধ্বংস হওয়া কানাডিয়ান বনাঞ্চলের পোড়া ধ্বংসাবশেষের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এবং দ্রুত পুনর্বনায়নের জন্য মাটিতে বীজ ভর্তি ক্যাপসুল ফেলছে। কানাডার উত্তর কুইবেক প্রদেশের এই উত্তরাঞ্চল ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে মেগাফায়ার বন ধ্বংস করেছিল এবং টানা দ্বিতীয় বছরের মতো একটি পাইলট প্রকল্প ড্রোন ব্যবহার করে নতুন ব্ল্যাক স্প্রুস ও জ্যাক পাইনের গাছ রোপণ করছে। চিবুগামাউ, কানাডা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ড্রোন চালিত এই পাইলট প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে ফ্ল্যাশ ফরেস্ট নামের একটি কোম্পানি। যারা উচ্চ আকাশ থেকে শুধু বীজ ফেলার পরিবর্তে এমন ক্যাপসুল ব্যবহার করছে যার মধ্যে বীজের পাশাপাশি পানি, পুষ্টি উপাদান এবং ছত্রাক রয়েছে। যাতে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা সর্বাধিক করা যায়। ফ্ল্যাশ ফরেস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্যামেরন জোন্স বলেন, ড্রানের মাধ্যমে পুনর্বনায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে, যেটিকে আমরা গত পাঁচ বছর ধরে চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করেছি। সমপ্রতি কোম্পানিটি তাদের প্রচেষ্টা কেন্দ্রীভূত করেছে। এক বা দুই বছরের মধ্যে পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চল এবং পুরনো পোড়া অঞ্চলগুলো এড়িয়ে চলছে। যেখানে ইতোমধ্যে গাছপালা গজিয়ে উঠেছে ও তা নতুন বীজের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কানাডায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ হেক্টর বন পুড়ে যাওয়ায় বন নিজে নিজে পুনরুদ্ধার করবে সেই অপেক্ষায় থাকা আর সম্ভব নয়। ২০২৩ সালে কানাডা দাবানলের একটি রেকর্ড বছর অতিক্রম করে। যেখানে প্রতিটি প্রদেশে আগুনের প্রভাব পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় ১.৮ কোটি হেক্টর (৪৪ মিলিয়ন একর) বনভূমি পুড়ে যায়। বিশেষ করে কুইবেক প্রদেশের উত্তরাঞ্চল, যেটি ফরাসিভাষী অঞ্চল, সেই বছর গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ড্রোন অপারেটর এবং ভূ-স্থানিক তথ্য বিশারদ ওয়েন লুকাস জানান, এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অগ্রিমভাবে সাইটগুলোর মানচিত্র তৈরি করা হয়। ড্রোনের রিমোট কন্ট্রোলে চোখ রেখে ওয়েন লুকাস ব্যাখ্যা করে বলেন, মানচিত্র তৈরির পর আমরা জলবায়ু উপাদান, ভৌত বৈশিষ্ট্য ও ভূমির গঠনভিত্তিক পরিবর্তন বিবেচনা করে বীজ ছড়ানোর জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করি। ফ্ল্যাশ ফরেস্ট কোম্পানিটির আলবার্টা প্রদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতেও একই ধরনের প্রকল্প চলছে। প্রতিটি ড্রোন দিনে প্রায় ৫০ হাজার গাছ রোপণের জন্য বীজ ফেলতে সক্ষম। ওয়েন লুকাস বলেন, আপনি যখন এখানে রোপণ করেন, তখন তাৎক্ষণিক ফলাফল দেখা যায় না কিন্তু শরৎকালে ফিরে এসে যখন গাছগুলিকে বাড়তে দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন আপনি একটি ইতিবাচক কাজ করেছেন। ২০২৩ সালের মতোই, এই বছরও এখন পর্যন্ত ৪.২ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি জমি পুড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরা এই মেগাফায়ারগুলোর প্রধান কারণ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। নিকটবর্তী ক্রি আদিবাসী সমপ্রদায়ের একজন নেত্রী অ্যাঞ্জেল মিয়ানস্কাম বলেন, এত বন হারানো সত্যিই কষ্টের, তবে তিনি এই কথা বলতেও খুশি যে, এখন নতুন ও উদ্ভাবনী উপায়ে কাজ করার সুযোগ এসেছে। ক্রি আদিবাসী সমপ্রদায় সরাসরি ফ্ল্যাশ ফরেস্ট কোম্পানির সঙ্গে মিলে স্থানীয় পুনর্বনায়নের পরিকল্পনা করেছে। কানাডায় আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আদিবাসী সমপ্রদায়গুলো। কারণ, তারা প্রায়শই দূরবর্তী ও গভীর বোরিয়াল বনাঞ্চলে বসবাস করে। অ্যাবিটিবি-টেমিসকামিঙ্গে-তে অবস্থিত কুইবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন বাস্তুবিদ্যার অধ্যাপক ম্যাকসেন্স মার্টিন বলেন, আমরা কানাডায় ক্রমাগতভাবে পুনর্বনায়নে বাধ্য হচ্ছি। বোরিয়াল (উত্তরাঞ্চলীয়) বনাঞ্চলের গাছগুলো আগুনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম কিন্তু আজকের পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে উদাহরণ স্বরূপ খুব অল্পবয়সী অনেক বন পুড়ে গিয়েছিল। যদি বন খুবই তরুণ হয়, তাহলে তার স্বাভাবিকভাবে পুনর্জন্ম নিতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। তাই রোপণই তখন একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়। যদিও ড্রোন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় দ্রুত পৌঁছানো যায়। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন অনেক বীজ নষ্ট হয়ে যায় এবং বীজ সংগ্রহ করাও আজ অত্যন্ত জটিল ও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে কানাডায় এখন বীজের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।