জানা নিউজ

করোনা-ডেঙ্গুর শঙ্কার মধ্যেই ২৬ জুন শুরু এইচএসসি পরীক্ষা

সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী এবার অংশ নিতে যাচ্ছে এ পরীক্ষায়। দেশের ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসব পরীক্ষার্থী অংশ নেবে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১০ আগস্ট এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত।

তবে পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে দেশে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সংক্রমণের এই প্রেক্ষাপটেও নির্ধারিত সূচিতে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্যানুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। একই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই দুই রোগের সংক্রমণই ঊর্ধ্বমুখী, যা অভিভাবকদের চিন্তায় ফেলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীরা তরুণ ও সচেতন হলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এজন্য তাদের নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, পরীক্ষার দিন কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানোর ব্যবস্থাও থাকবে। ১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

১৫ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত নির্দেশনা ওয়েবসাইট ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করা হবে। যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসমা বেগম জানান, সরকার থেকে ইতোমধ্যে মাস্ক ব্যবহারসহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তবে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া আমাদের হাতে বিকল্প নেই। পরিস্থিতির অবনতি হলে বিকল্প পরিকল্পনা অনুসরণ করা হবে।”

ময়মনসিংহ বোর্ডের সচিব অধ্যাপক সফিউদ্দিন সেখ জানান, ১৫ জুন অফিস খোলার পর আন্তঃবোর্ড বৈঠকে পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামছুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।

পরীক্ষা কেন্দ্র সংখ্যা কম থাকায় অনেক অভিভাবক সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন কলেজের এক ছাত্রীর মা বলেন, “বড় বড় কলেজে কেন্দ্র না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সরকার চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্র করে দ্রুত পরীক্ষা নিতে পারে।”

কয়েকজন শিক্ষক জানান, নিজ কলেজে কেন্দ্র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা ও ডেঙ্গুর মধ্যে এই দায়িত্ব পালনে তাদেরও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, শুধু তিন ঘণ্টার পরীক্ষা নয়, শিক্ষকদের অনেক আগেই কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে।

করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণের মধ্যেই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ সত্ত্বেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদভাবে পরীক্ষা আয়োজনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতি হলে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।