ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ক্যাথলিক গির্জায় রোববার অ্যালায়েড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এডিএফ) বিদ্রোহীদের হামলায় ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘ মিশন এবং কঙ্গোর সামরিক বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে বুনিয়া থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায় জানায়, মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষাকৃত শান্ত সময়ে অঞ্চলটিতে এই হামলা হয়েছে। ইতুরি প্রদেশের রাজধানী বুনিয়া থেকে টেলিফোনে বাসিন্দারা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন, কোমান্ডা শহরের ওই ক্যাথলিক গির্জায় উপাসনাকারীরা প্রার্থনায় অংশ নেয়ার সময় ২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেওয়া এডিএফ হামলা চালায়।দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন জানিয়েছে, এই হামলায় নয়জন শিশুসহ ৪৩ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের উপ-প্রধান ভিভিয়ান ভ্যান ডি পেরে বলেছেন, ‘নিরাপত্তাহীন বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে, বিশেষ করে উপাসনালয়ে এই ধরণের আক্রমণ কেবল বিদ্রোহই নয় বরং মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সমস্ত নিয়মের পরিপন্থী’। কঙ্গোর সেনাবাহিনী এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, প্রায় ৪০ জন বেসামরিক লোককে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং আরো বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে’। এতে বলা হয়েছে যে এডিএফ ‘নিরাপত্তাহীন শান্তিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর হত্যা ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো পূর্বে কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল। ইতুরি অঞ্চলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জুলস এনগোঙ্গো হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে এএফপিকে বলেন, ‘এডিএফ বিদ্রোহীদের মধ্য থেকে শত্রুদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ তবে তিনি হতাহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাননি। উগান্ডার সীমান্তবর্তী ইতুরি অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে শান্তির পর এই রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। কয়েক মাস ধরেই ইতুরি অঞ্চলে শান্ত অবস্থা বিরাজ করছিল। ফেব্রুয়ারিতে মাম্বাসা অঞ্চলে এডিএফের সর্বশেষ বড় হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছিল। ইরুমু অঞ্চলের বাণিজ্যিক শহর কোমান্ডা তিনটি প্রদেশ-শোপো, উত্তর কিভু এবং মানিয়েমাকে সংযুক্ত করে রেখেছে। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত উগান্ডান বিদ্রোহীদের এই দলটি কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে লুটপাট ও হত্যার মাত্রা আরো বাড়িয়েছে। এই অঞ্চলে কঙ্গোর সেনাবাহিনীর পাশাপাশি উগান্ডার সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলেও সহিংসতা কমানো যায়নি। ২০২১ সালের শেষ দিকে কামপালা ও কিনশাসা এডিএফের বিরুদ্ধে ‘শুজা’ নামের একটি যৌথ সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। তবে সেটি এখন পর্যন্ত বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কঙ্গোর সেনাবাহিনী এডিএফ-এর ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জনগণকে ‘অতিরিক্ত সতর্ক থাকার এবং যেকোনো সন্দেহজনক উপস্থিতি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানোর’ আহ্বান জানিয়েছে।