জানা নিউজ

এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম দিনেই অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার

সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষার প্রথম দিনেই চমকে দিয়েছে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। ফরম পূরণ করেও প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার বেশি। একই দিনে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছে আরও ২২ জন শিক্ষার্থী।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এবছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ লাখ ৮৫০ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে।

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতির ঘটনা ঘটেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে, যেখানে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৯ হাজার ৬২৩ জন শিক্ষার্থী। ঢাকা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৩ হাজার ৪৯৬ জন, কুমিল্লায় ২ হাজার ৫৫৩, যশোরে ১ হাজার ৮০০, রাজশাহীতে ১ হাজার ৬২২, চট্টগ্রামে ১ হাজার ১৭৩, দিনাজপুরে ১ হাজার ৩৪১, বরিশালে ১ হাজার ৩৩, সিলেটে ৮৭৮, ময়মনসিংহে ৮৪২ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ২ হাজার ৫৬৭ জন।

অন্যদিকে, পরীক্ষায় অসদুপায় গ্রহণের কারণে যেসব শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে, তাদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১০ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ১০ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ২ জন রয়েছে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ জন। এবারের অনুপস্থিতির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর একাধিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার। মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় এবং মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, “সরকার সচেতনভাবে কাজ করায় এবার এখনো পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।”

তিনি আরও জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং পরবর্তী দিনগুলোতেও যেন পরীক্ষার পরিবেশ অবিচল থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থান বজায় থাকবে।

পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন, শিক্ষক, অভিভাবক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, অনুপস্থিতির হার বাড়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ—শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা, প্রস্তুতির ঘাটতি, পারিবারিক বা আর্থিক সমস্যা এবং অনুপ্রেরণার অভাব। এসব বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও নীতিনির্ধারণী উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

পরীক্ষা আগামী কয়েক সপ্তাহ চলবে, আর তাই প্রথম দিনের চিত্র ভবিষ্যতের ট্রেন্ড বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হতে পারে বলে মত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।