জানা নিউজ

ইসরাইলি হামলায় গাজায় তিনশতাধিক নিহত

গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০-এ পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামলায় আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। এই অচলাবস্থার মধ্যেই আজকের বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস ও রাফাহসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও কমান্ডারদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং যতদিন প্রয়োজন হবে, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হামাস আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে।”

অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নতুন করে সংঘাত উসকে দিচ্ছে। হামাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইসরায়েল এই হামলা চালিয়ে গাজায় থাকা ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মির ভাগ্য অনিশ্চিত করে তুলেছে। মধ্যস্থতাকারীরা যেন ইসরায়েলের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তাদের দায়ী করে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অঞ্চলটির অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, আজকের হামলায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ আরও বেড়েছে।

ইসরায়েলি হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে সেটি নিয়ে মতবিরোধ থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চললেও আজকের হামলার পর সেই প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় ইসরায়েলের আজকের হামলা যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত ভাঙনকে চিহ্নিত করতে পারে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা নতুন মাত্রা পেতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সাম্প্রতিক হামলার পর সেই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গাজাবাসীরা নতুন করে ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই অঞ্চলের মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজায় চলমান সহিংসতা এবং নিরীহ মানুষের প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই ধরনের মানবিক সংকট সাধারণ মানুষের জীবনে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, তা কল্পনাতীত। গাজার মতো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত এবং তার ফলশ্রুতিতে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিকতার চরম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।