জানা নিউজ

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে: ইরান

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনার আবহে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন করে জটিল হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরতে চায়, তবে তাদের ইরানের ওপর আরও সামরিক হামলার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখ্ত-রাভাঞ্চি। গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও পরোক্ষ নয়, বরং সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা এবং একের পর এক হামলা-পাল্টা হামলার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেন ইরানি মন্ত্রী।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে ইসরায়েল প্রথম হামলা শুরু করে গত শুক্রবার। মাস্কটে দুই দিন পর যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের ষষ্ঠ দফা আলোচনা বসার কথা থাকলেও সেটি থমকে যায়। ইসরায়েল তখন শুধু ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনাতেই নয়, দেশটির শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদের ওপরও হামলা চালায়। তেহরানের ওপর অভিযোগ ছিল, তারা নাকি পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এর জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, আর এভাবে দুই পক্ষ টানা বারো দিন ধরে আকাশপথে একে অপরের স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে।
এ সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় যুক্ত হয়। গত শুক্রবার মার্কিন বোমারু বিমান ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান-এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে। তবে এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব স্থাপনা ‘পুরোপুরি গুঁড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। বরং কয়েক মাসের মধ্যেই ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম আবার শুরু করতে সক্ষম হতে পারে বলেও জানান তিনি।
ইরানি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখ্ত-রাভাঞ্চি জানিয়েছেন, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি গোপনে পরমাণু বোমা তৈরির অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পেতে দেওয়া হয়নি বলেই ইরানকে নিজের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। কতটুকু মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ চলবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে শর্ত যদি হয় যে ইরানের সমৃদ্ধকরণ থাকবে না, শূন্য মাত্রায় রাখতে হবে, আর রাজি না হলে বোমা মারা হবে-তাহলে সেটি ‘জঙ্গলের আইন’ ছাড়া কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দুনিয়ার আস্থাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাখ্ত-রাভাঞ্চি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কিছু ইউরোপীয় নেতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, যারা ইরানের সমালোচনা করছেন, তাদের উচিত একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা করা। তাঁর মতে, কারও যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না থাকে, তাহলে তাদের চুপ থাকা ভালো। আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।
তাখ্ত-রাভাঞ্চি জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা শুনেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে কোনো হামলা চালাতে কিংবা ইরানের সরকার পরিবর্তন করতে চায় না। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক পর্যায়ে ইরানিদের ‘মোল্লাতন্ত্র’ উৎখাত করে স্বাধীনতার জন্য উঠে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প আবার বলেছেন, তিনি এমন কোনো সরকার পরিবর্তন চান না।
ইরানি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, ইরানে বিদেশি হামলার হুমকি আসলেই জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়, যদিও সরকারের কিছু কার্যক্রমের সমালোচনা মানুষের মধ্যে থাকতেই পারে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে ইরানের ওপর সামরিক হামলা না হলে দেশটি যুদ্ধবিরতি বজায় রাখবে। একইসঙ্গে জানান, পারস্য উপসাগরের আরব রাষ্ট্রগুলো আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তিনি সরাসরি কোনো দেশের নাম নেননি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, কাতার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
সবশেষে তাখ্ত-রাভাঞ্চি সাফ জানিয়ে দেন, ইরান কোনো যুদ্ধ চায় না, তারা চায় আলোচনা ও কূটনৈতিক সমাধান। তবে তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন আরেকবার ‘অবাক হতে না হয়’।