স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পেশাদারিত্বের পাশাপাশি জনসংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এসএসএফ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করবে।”
বুধবার (১৮ জুন) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত ‘প্রধান উপদেষ্টার দরবার’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় বাহিনীর পেশাদারিত্ব, উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী, যারা আমার এবং রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। গত ১০ মাসে এ বাহিনী দেশে-বিদেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছে।” তিনি বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্যের সহজ প্রবাহের ফলে নিরাপত্তার ধরন ও চ্যালেঞ্জ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এসএসএফ সেই চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে।” তিনি জানান, এসএসএফ বর্তমানে নিয়মিত নিরাপত্তা হুমকির মূল্যায়ন করে এবং তা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে এসএসএফ-এর কার্যক্রমের প্রশংসা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “সম্প্রতি এসএসএফ যমুনা সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। আশা করি তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তাও একইভাবে উন্নত করবে।”
এসএসএফকে জনবান্ধব রাখার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য দীর্ঘ সময় সাধারণ ফ্লাইট বন্ধ রাখা হতো, যা জনভোগান্তির কারণ হতো। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পায়।”
অধ্যাপক ইউনূস জানান, এসএসএফ-এর যানবাহন ও সরঞ্জামাদি আধুনিকায়ন, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম সংযোজন এবং উন্নত প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই বাহিনী তাদের ১২ বছর পুরনো ভিএইচএফ রেডিও সিস্টেম পরিবর্তন করে ইউএইচএফ প্রযুক্তি সংযোজন করতে যাচ্ছে, যা অভিযানিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি এসএসএফ-এর ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা আগামী মাস থেকেই ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএফকে বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় কাজ করতে হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি আশা করি, এসএসএফ সব সহযোগী বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাবে।”
অনুষ্ঠানে এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।