জানা নিউজ

গাজায় ত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৫১, আহত শতাধিক

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় চিকিৎসাকর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে একটি প্রধান সড়কের পাশে শত শত মানুষ ত্রাণের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। সে সময় ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক থেকে অন্তত দুটি গোলা ছুড়ে মারে। এতে বহু মানুষ ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং আহতদের স্থানীয় নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নাসের হাসপাতাল ইতোমধ্যেই ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগীতে ভরে গেছে। অনেককে হাসপাতালের মেঝে ও করিডোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাসেবার সংকটে রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগেও গাজার ত্রাণকেন্দ্রের আশেপাশে এমন হামলার পর ইসরায়েল কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল— যদিও দায় চাপিয়েছে হামাসসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ওপর।

একদিন আগেই, সোমবার (১৬ জুন) গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফাহতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ২৩ জন।

জিএইচএফ দাবি করেছে, তাদের কেন্দ্রগুলো থেকে ৩০ লাখের বেশি খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই। তবে বাস্তবতা ভিন্ন: ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তার মতে, এই সহায়তা কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমি অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত চাই— কেন সাধারণ নিরীহ মানুষকে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে হত্যা করা হচ্ছে।”

২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৩৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের মাঝেও ইসরায়েল গাজায় তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আর সেই সঙ্গে বেড়েই চলেছে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষুধা ও অনিশ্চয়তা।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।